শনিবার, ২৩ জুন, ২০১২

৩৬) সূরা ইয়াসীন ( মক্কায় অবতীর্ণ ) আয়াত - ৮৩

শুরূ করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করূণাময়,অতি দয়ালু।

০১. ইয়া-সীন

০২. প্রজ্ঞাময় কোরআনের কসম।

০৩. নিশ্চয় আপনি প্রেরিত রাসূলগণের একজন।

০৪. সরল পথে প্রতিষ্ঠিত।

০৫. কোরআন পরাক্রমশালী পরম দয়ালু আল্লাহর তরফ থেকে অবতীর্ণ,

০৬. যাতে আপনি এমন এক জাতিকে সতর্ক করেন ,যাদের পূর্ব পুরূষগলকেও সতর্ক করা হয়নি।ফলে তারা গাফেল।

০৭. তাদের অধিকাংশের জন্যে শাস্তির বিষয় অবধারিত হয়েছে।সুতরাং তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না।

০৮. আমি তাদের গর্দানে/গলায় চিবুক পর্যন্ত বেড়ী পরিয়েছি।ফলে তাদের মস্তক উদ্র্ধমূখী হয়ে গেছে।

০৯. আমি তাদের সামনে ও পিছনে প্রাচীর স্থাপন করেছি,অতঃপর তাদেরকে আবৃত করে দিয়েছি,ফলে তারা দেখে না।

১০. আপনি তাদেরকে সতর্ক করূন বা না করূন,তাদের পক্ষে/কাছে দুয়েই সমান;তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না।

১১. আপনি কেবল তাদেরকেই সতর্ক করতে পারেন,যারা উপদেশ অনুসরন করে এবং দয়াময় আল্লাহকে না দেখে ভয় করে।অতএব আপনি তাদেরকে সুসংবাদ দিয়ে দিন ক্ষমা ও সম্মানজনক পুরস্কারের।

১২. আমিই মৃতদেরকে জীবিত করি এবং তাদের কর্ম ও কির্তীসমূহ লিপিবদ্ধ করি।আমি প্রত্যেক বস্তু স্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষিত রেখেছি।

১৩. আপনি তাদের কাছে সে জনপদের অধিবাসীদের দৃষ্টান্ত বর্ণনা করূন,যখন সেখানে রসূল আগমন করেছিলেন।

১৪. আমি তাদের নিকট দুজন রসূল প্রেরণ করেছিলাম,অতঃপর ওরা তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্নকরল।তখন আমি তাদেরকে শক্তিশালী করলাম তৃতীয় একজনের মাধ্যমে।তারা সবাই বলল,আমরা তোমাদের প্রতি প্রেরিত হয়েছি।

১৫. তারা বলল,তোমরা তো আমাদের মতই মানুষ,রহমান আল্লাহ কিছুই নাযিল করেননি।তোমরা কেবল মিথ্যাই বলে যাচ্ছ।

১৬. রাসূলগণ বলল,আমাদের পরওয়ারদেগার জানেন,আমরা অবশ্যই তোমাদের প্রতি প্রেরিত হয়েছি।

১৭. পরিস্কারভাবে আল্লাহর বাণী পৌছে দেয়াই আমাদের দায়িত্ব।

১৮. তারা বলল,আমরা তোমাদেরকে অশুভ-অকল্যাণকর দেখছি।যদি তোমরা বিরত না হও,তবে অবশ্যই তোমাদেরকে প্রস্তর বর্ষণে হত্যা করব এবং আমাদের পক্ষ থেকে তোমাদেরকে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি স্পর্শ করবে।

১৯. রসূলগণ বলল,তোমাদের অকল্যাণ তোমাদের সাথেই! এটা কি এজন্যে যে,আমরা তোমাদেরকে সদুপদেশ দিয়েছি?বস্তুতঃ তোমরা সীমালংঘনকারী সম্প্রদায় বৈ নও।

২০. অতঃপর শহরের প্রান্তভাগ থেকে এক ব্যক্তি দৌড়ে এল।সে বলল,হে আমার সম্প্রদায় তোমরা রসূলগণের অনুসরন কর।

২১. অনুসরণ কর তাদের,যারা তোমাদের কাছে কোন বিনিময় কামনা করে না,অথচ তারা সুপথ প্রাপ্ত।

২২. আমার কি হল যে,যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং যার কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তীত হবে,আমি তাঁর এবাদত করব না?

২৩. আমি কি তাঁকে ছেড়ে অন্যান্যদেরকে উপাস্যরূপে গ্রহন করব?করূণাময় যদি আমাকে কষ্টে নিপতিত করতে চান,তবে তাদের সুপারিশ আমার কোনই কাজে আসবে না এবং তারা আমাকে রক্ষাও করতে পারবে না।

২৪. এরূপ করলে আমি প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হব।

২৫. আমি নিশ্চিতভাবে তোমাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলাম।অতএব আমার কাছথেকে শুনে নাও।

২৬. তাকে বলা হল জান্নাতে প্রবেশ কর।সে বলল হায় আমার সম্প্রদা যদি কোন ক্রমে জানতে পারত-

২৭. যে আমার পরওয়ারদেগার আমাকে ক্ষমা করেছেন এবং আমাকে সম্মানিতদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

২৮. তারপর আমি তার সম্প্রদায়ের উপর আকাশ থেকে কোন বাহিনী অবতীর্ণ করিনি এবং আমি (বাহিনী)অবতরণকারীও না।

২৯. বস্তুতঃ এ ছিল এক মহানাদ।অতঃপর সঙ্গে সঙ্গে সবাই স্তব্ধ হয়ে গেল।

৩০. বান্দাদের জন্যে আক্ষেপ যে,তাদের কাছে এমন কোন রসূলই আগমন করেনি যাদের প্রতি তারা বিদ্রুপ করে না।

৩১. তারা কি প্রত্যক্ষ করে না,তাদের আগে আমি কত সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছিযে,তারা তাদের মধ্যে আর ফিরে আসবে না।

৩২. ওদের সবাইকে সমবেত অবস্থায় আমার দরবারে উপস্থিত হতেই হবে।

৩৩. তাদের জন্য একটি নিদর্শন মৃত পৃথিবী।আমি একে সঞ্জীবিত করি এবং তা থেকে উপন্ন করি শস্য,তারা তা থেকে ভক্ষন করে।

৩৪. আমি তাতে সৃষ্টি করি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান এবং প্রবাহিত করি তাতে নির্ঝরিনী/ঝর্নাধারা।

৩৫. যাতে তারা তার ফল খায়।তাদের হাত একে সৃষ্টি করেনা।অতঃপর তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেনা কেন?

৩৬. পবিত্র তিনি যিনি জমিন থেকে উপন্ন উদ্ভিদকে,তাদেরই মানুষকে এবং যা তারা জানেনা,তার প্রত্যেককে জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছেন।

৩৭. তাদের জন্যে এক নিদর্শন রাত্রি,আমি তা থেকে দিনকে অপসারিত করি,তখনই তারা অন্ধকারে থেকে যায়।

৩৮. সূর্য তার নির্ধারিত অবস্থানে আবর্তন করে।এটা পরাক্রমশালী,সর্বজ্ঞ,আল্লাহর নিয়ন্ত্রন।

৩৯. চাঁদের জন্যে আমি বিভিন্ন মনযিল নির্ধারিত করেছি।অবশেষে সে পুরাতন খর্জুর শাখার অনুরূপ হয়ে যায়।

৪০. সূর্য নাগাল পেতে পারেনা চাঁদের এবং রাত্রি আগে চলে না দিনের প্রত্যেকেই আপন কক্ষপথে সন্তরণ করে।

৪১. তাদের জন্যে একটি নিদর্শন এই যে,আমি তাদের সন্তান-সন্ততিকে বোঝাই নৌকায় আরোহণ করিয়েছি।

৪২. এবং তাদের জন্যে নৌকার অনুরূপ যানবাহন সৃষ্টি করেছি,যাতে তারা আরোহণ করে।

৪৩. আমি ইচ্ছা করলে তাদেরকে নিমজ্জিত করতে পারি,তখন তাদের জন্যে কোন সাহায্যকারী নেই এবং তারা পরিত্রাণও পাবে না।

৪৪. কিন্তু আমারই পক্ষ থেকে কৃপা এবং তাদেরকে কিছু কাল জীবনোপভাগ করার সুযোগ দেয়ার কারণে তা করি না।

৪৫. আর যখন তাদেরকে বলা হয়,তোমরা সামনের আযাব ও পেছনের আযাবকে ভয় কর,যাতে তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করা হয়,তখন তারা তা অগ্রাহ্য করে।

৪৬. যখনই তাদের পালনকর্তার আদেশাবলীর মধ্যে থেকে কোন আদেশ তাদেরকাছে আসে,তখনই তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।

৪৭. যখন তাদেরকে বলা হয়,আল্লহ তোমাদেরকে যা দিয়েছিন,তা থেকে ব্যয় কর।তখন কাফেররা মুমিনগণকে বলে,ইচ্ছা করলেই আল্লহ যাকে খাওয়াতে পারতেন,আমরা তাকে কেন খাওয়াব?তোমরা তো স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে পতিত রয়েছ।

৪৮. তারা বলে,তোমরা সত্যবাদী হলে বল এই ওয়াদা কবে পূর্ণ হবে?

৪৯. তারা কেবল একটা ভয়াবহ শব্দের অপেক্ষা করছে,যা তাদেরকে আঘাত করবে তাদের পারস্পরিক বাকবিতন্ডাকালে।

৫০. তখন তারা ওছিয়ত করতেও সক্ষন হবে না।এবং তাদের পরিবার-পরিজনের কাছেও ফিরে যেতে পারবে না।

৫১. শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে,তখনই তারা কবর থেকে তাদের পালনকর্তার দিকে ছুটে চলবে।

৫২. তারা বলবে,হায় আমাদের দুর্ভোগ!কে আমাদেরকে নিদ্রাস্থল থেকে উখিত করল?রহমান আল্লহ তো এরই ওয়াদা দিয়েছিলেন এবং রসূলগণ সত্য বলেছিলেন।

৫৩. এটা তো হবে কেবল এক মহানাদ।সে সময়েই তাদের সবাইকে আমার সামনে উপস্থিত করা হবে।

৫৪. আজকের দিনে কারও প্রতি জুলুম করা হবে না এবং তোমরা যা করবে কেবল তারই প্রতিদান পাবে।

৫৫. এদিন জান্নতীরা আনন্দে মশগুল থাকবে।

৫৬. তারা এবং তাদের স্ত্রীরা উপবিষ্ট থাকবে ছায়াময় পরিবেশে আসনে হেলান দিয়ে।

৫৭. সেখানে তাদের জন্যে থাকবে ফল-মূল এবং যা চাইবে।

৫৮. করূণাময় পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাদেরকে বলা হবে সালাম।

৫৯. হে অপরাধীরা ! আজ তোমরা আলাদা হয়ে যাও।

৬০. হে বনী-আদম ! আমি কি তোমাদেরকে বলে রাখিনি যে, শয়তানের এবাদত করো না, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু?

৬১. এবং আমার এবাদত কর।এটাই সরল পথ।

৬২. শয়তান তোমাদের অনেক দলকে পথভ্রষ্ট করেছেন।তবুও কি তোমরা বুঝনি?

৬৩. এই সেই জাহান্নাম,যার ওয়াদা তোমাদেরকে দেয়া হতো।

৬৪. তোমাদের কুফরের কারনে আজ এতে প্রবেশ কর।

৬৫. আজ আমি তাদের মুখে মোহর এঁটে দেব তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং তাদের পা তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে।

৬৬. আমি ইচ্ছা করলে তাদের দৃষ্টি শক্তি বিলুপ্ত করে দিতে পারতাম,তখন তারা পথের দিকে দৌড়াতে চাইলে কেমন করে দেখতে পেত !

৬৭. আমি ইচ্ছা করলে তাদেরকে স্ব স্ব স্থানে আকার বিকৃত করতে পারতাম,ফলে তারা আগেও চলতে পারত না এবং পেছনেও ফিরে যেতে পারত না।

৬৮. আমি যাকে দীর্ঘ জীবন দান করি,তাকে সৃষ্টিগত পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেই।তবুও কি তারা বুঝে না?

৬৯. আমি রসূলকে কবিতা শিক্ষা দিইনি এবং তা তার জন্যে শোভনীয়ও নয়।এটা তো এক উপদেশ ও প্রকাশ্য কোরআন।

৭০. যাতে তিনি সতর্ক করেন জীবিতকে এবং যাতে কাফেরদের বিরূদ্ধে অভিযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়।

৭১. তারা কি দেথে না,তাদের জন্যে আমি আমার নিজ হাতের তৈরী বস্তুর দ্বারা চতুস্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছি,অতঃপর তারাই এগুলোর মালিক।

৭২. আমি এগুলোকে তাদের হাতে অসহায় করে দিয়েছি।ফলে এদের কতক তাদের বাহন এবং কতক তারা ভক্ষন করে।

৭৩. তাদের জন্যে চতুস্পদ জন্তুর মধ্যে অনেক উপকারিতা ও পানিয় রয়েছে।তবুও তারা কেন শুকরিয়া আদায় করে না।

৭৪. তারা আল্লাহর পরিবর্তে অনেক উপাস্য গ্রহণ করেছে যাতে তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হতে পারে।

৭৫. অথচ এসব উপাস্য তাদেরকে সাহায্য করতে সক্ষম হবে না এবং এগুলো তাদের বাহিনী রূপে ধৃতহয়ে আসবে।

৭৬. অতএব তাদের কথা যেন আপনাকে দুঃখিত না করে।আমি জানি যা তারা গোপনে করে এবং যা তারা প্রকাশ্যে করে।

৭৭. মানুষ কি দেখে না যে,আমি তাকে সৃষ্টি করেছি বীর্য থেকে?অতঃপর তখনেই সে হয়ে গেল প্রকাশ্য বাকবিতন্ডাকারী।

৭৮. সে আমার সম্পর্কে এক অদ্ভূত কথা বর্ণনা করে,অথচ সে নিজের সৃষ্টি (হওয়া) ভুলে যায়।সে বলে কে জীবিত করবে অস্থিসমূহকে যখন সেগুলো পঁচে গলে যাবে?

৭৯. বলূন,যিনি প্রথমবার সেগুলোকে সৃষ্টি করেছেন,তিনিই জীবিত করবেন।তিনি সর্বপ্রকার সৃষ্টি সম্পর্কে সম্যক অবগত।

৮০. যিনি তোমাদের জন্যে সবুজ বৃক্ষ থেকে আগুন উপন্ন করেন।তখন তোমরা তা তেকে আগুন জালাও।

৮১. যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ড সৃষ্টি করেছেন,তিনিই কি তাদের অনুরূপ সৃষ্টি করতে সক্ষমনন?হ্যাঁ তিনি মহাস্রষ্টা,সর্বজ্ঞ।

৮২. তিনি যখন কোন কিছু করতে ইচ্ছা করেন,তখন তাকে কেবল বলে দেন,-হও-তখনই তা হয়ে যায়।

৮৩. অতএব পবিত্র তিনি,যাঁর হাতে সবকিছুর রাজত্ব এবং তাঁরই দিকে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।

সমাপ্ত

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন