সোমবার, ৯ জুন, ২০১৪

হাদিস নং: ৬৯৩১ (জাহমিয়াদের মতের খন্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ অধ্যায়)

৬৯৩১/৬৪: আবদুল আযীয ইব্ন আবদুল্লাহ্ (রহঃ) . . . . . হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, লোকেরা (সাহাবাগণ) জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ)! কিয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাব? রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ তোমরা কি পূর্ণিমার রাতে চাঁদ দেখতে বাধাপ্রাপ্ত হও? সবাই বলে উঠলেন, না ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) । তিনি আবার বললেনঃ মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখতে কি তোমরা বাধা-প্রাপ্ত হও? সবাই বলে উঠলেন, না, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) । তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ তোমরা অনুরুপ আল্লাহ্ কে দেখতে পাবে । কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ লোকদেরকে সমবেত করে বলবেন, যে যার ইবাদত করছিলে সে যেন তার অনুসরণ করে । তারপর যারা সূর্যের ইবাদত করত, সূর্যের অনুসরণ করবে । যারা চাঁদের ইবাদত করত, তারা চাঁদের অনুসরণ করবে । আর যারা তাগুতদের পূজা করত, তারা তাদের অনুসরণ করবে । অবশিষ্ট থাকবে এই উম্মাত । এদের মধ্যে এদের সুপারিশকারীরাও থাকবে অথবা রাবী বলেছেন, মুনাফিকরাও থাকবে । এখানে বর্ণনাকারী ইবরাহীম (রহঃ) সন্দেহ পোষণ করেছেন । তারপর মহান আল্লাহ তাদের কাছে এসে বলবেনঃ আমিই তোমাদের রব । তখন তারা বলবে, যতক্ষন আমাদের রব আমাদের কাছে না আসবেন, ততক্ষন আমরা এ স্থানেই অবস্হান করব । আমাদের রব যখন আসবেন, তখন আমরা তাকে চিনতে পারব । তারপর আল্লাহ এমন এক আকৃতিতে তাদের কাছে আসবেন, যে সুরতে তারা তাঁকে চিনবে । তখন তিনি বলবেন, তোমাদের রব আমিই । তারাও বলে উঠবে হ্যা, আপনিই আমাদের রব । তারপর তারা তাঁর অনুসরণ করবে । এরপর দোযখের উপর পূল কায়েম করা হবে । যারা পূল অতিক্রম করবে, আমি এবং আমার উম্মাত তাদের মধ্যে প্রথম থাকব । সেদিন একমাত্র রাসুলগন ছাড়া আর কেউই কথা বলতে পারবে না । আর রাসুলগণেরও আবেদন হবে শুধু আল্লাহুম্মা সাল্লিম, সাল্লিম (আয় আল্লাহ! নিরাপদে রাখুন, নিরাপদে রাখূন) । এবং জাহান্নামে সাদান-এর কাটার মত আঁকড়া থাকবে । তোমরা দেখেছ কি সাদান-এর কাঁটা? সাহাবাগণ-বললেনঃ জী হ্যা, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) । রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ জাহান্নামের যে কাটাগুলো এ সাদান-এর কাঁটার মত । হ্যাঁ, তবে সেগুলো যে কত বড় হবে তা একমাত্র আল্লাহই জানেন । ওসব কাঁটা মানুষকে তাদের কর্ম অনুপাতে বিদ্ধ করবে । কতিপয় মানুষ থাকবে ঈমানদার, তারা তাদের আমলের কারণে নিরাপদ থাকবে । আর কেউ কেউ তার আমলের কারণে ধংস হবে । কাউকে নিক্ষেপ করা হবে আর কাউকে প্রতিদান দেওয়া হবে । কিংবা অনুরুপ কিছু রাবী বলেছেনঃ তারপর (মহান আল্লাহ) প্রকাশমান হবেন । তিনি বান্দাদের বিচারকার্য সমাপন করে যখন আপন রহমতে কিছু সংখ্যক দোযখবাসীকে বের করতে চইবেন, তখন তিনি তাদের মধ্যকার শিরক-মুক্তদেরকে দোযখ থেকে বের করে দেয়ার জন্য ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দিবেন । তারাই হচ্ছে ওসব বান্দা যাদের উপর আল্লাহ রহমত করবেন, যারা সাক্ষ্য দিয়েছে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই । সিজদার চিহ্ন দ্বারা তাদের ফেরেশতাগণ চিনতে পারবেন । সিজদার চিহ্নগুলো ছাড়া সেসব আদম সন্তানের সারা দেহ জাহান্নামের আগুন ভষ্মীভূত করে দেবে । সিজদার চিহ্নসমূহ জ্বালিয়ে দেওয়া আল্লাহ্ জাহান্নামের উপর হারাম করে দিয়েছেন । অতঃপর তাদেরকে আগুনে বিদগ্ন অবস্হায় জাহান্নাম থেকে বের করা হবে । তাদের ওপর ঢালা হবে সঞ্জীবনীর পানি । এর ফলে নিম্নদেশ থেকে তারা এমনভাবে সজীব হয়ে ওঠবে, প্লাবনে ভাসমান বীজ মাটি থেকে যেভাবে গজিয়ে ওঠে । এরপর আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদের বিচার ফায়সালা সমাপন করবেন । এদের মধ্য থেকে একজন অবশিষ্ট রয়ে যাবে, যে জাহান্নামের দিকে মুখ করে থাকবে । জাহান্নামীদের মধ্যে এই হচ্ছে সর্বশেষ জান্নাতে প্রবেশকারী । তখন সে বলবে, হে আমার রব! আমার চেহারাটা জাহান্নাম থেকে ফিরিয়ে দাও । কেননা, জাহান্নামের (দুর্গন্ধময়) হাওয়া আমাকে অস্থির করে তুলছে এবং এর শিখা আমাকে জ্বালাচ্ছে । তখন সে আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁর কাছে প্রার্থনা করবে । তারপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তোমার প্রার্থনার জিনিস যদি তোমাকে প্রদান করা হয়, তবে অন্য কিছু চাইবে না তো? তখন সে বলবে, না, তোমার ইজ্জতের কসম করে বলছি, তা ছাড়া আমি আর কিছু চাইব না । তখন সে আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁকে বহু অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দেবে । ফলে আল্লাহ তার চেহারা জাহান্নাম থেকে ফিরিয়ে দিবেন । যখন সে জান্নাতের দিকে মুখ ফিরাবে এবং জান্নাতকে দেখবে, সে আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী যতক্ষন চুপ থাকার চুপ থেকে বলবে, হে আমার রব! আমাকে জান্নাতের দার পর্যন্ত এগিয়ে দাও । আল্লাহ তখন তাকে বলবেন, তুমি কি বহু প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার দাওনি যে তোমাকে যা দেওয়া হবে, তা ছাড়া আর কিছু তুমি কখনো চাইবে না । সর্বনাশ তোমার, হে আদম সন্তান! কতই না প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী তুমি । তখন সে বলবে, হে আমার রব! আল্লাহ তখন তাকে বলবেন, আচ্ছা, এটি যদি তোমাকে দেওয়া হয়, আর কিছু তো চাইবে না? সে বলবে, তোমার ইজ্জতের কসম! সেটি ছাড়া আমি আর কিছুই চাইব না । তারপর আল্লাহর ইচ্ছানূযায়ী প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার দেবে আর আল্লাহ তাকে জান্নাতের দরজা পঁর্যন্ত এগিয়ে নেবেন । যখন সে জান্নাতের দরজার কাছে দাড়াবে, তখন তার জন্য জান্নাত উনূক্ত হয়ে যাবে, তখন সে এর মধ্যকার আরাম আয়েশ-ও ভোগ বিলাসের প্রাচুর্য দেখতে পাবে । তখন সে আল্লাহর ইচ্ছানূযায়ী নীরব থেকে, পরে বলবে, হে আমার রব! আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিন । আল্লাহ বলবেনঃ তুমি কি আমাকে এই প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার দাওনি যে, তোমাকে যা দেওয়া হবে, তা ছাড়া আর কিছু প্রার্থনা করবে না? সর্বনাশ তোমার! হে বনী আদম! কতই না প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী তুমি । তখন সে বলবে, হে আমার রব! আমি তোমার সৃষ্টিরাজির মধ্যে নিকৃষ্টতর হতে চাই না । তখন সে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে থাকবে । অবশেষে আল্লাহ এতে হেসে দিবেন । আল্লাহ তার অবস্হার প্রেক্ষিতে হেসে তাকে নির্দেশ দিবেন, তুমি জান্নাতে প্রবেশ কর । সে জান্নাতে প্রবেশ করলে আল্লাহ তাকে সম্বোধন করে বলবেন এবার তুমি চাও । সে তখন রবের কাছে যাচ্ঞা করবে এবং আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করবে । পরিশেষে আল্লাহ স্বয়ং তাকে স্বরণ করিয়ে দিয়ে বলবেন, এটা, ওটা চাও । এতে তার আরয-আকাঙ্ক্ষা সমাপ্ত হলে আল্লাহ্ বললেনঃ তোমাকে ওগুলো দেয়া হল, সাথে সাথে সে পরিমাণ আরো দেয়া হল ।
আতা ইব্ন ইয়াযীদ (রহঃ) বলেনঃ হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) যখন হাদীসটির বর্ণনা দিচ্ছিলেন, তখন হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) ও তার সাথে ছিলেন । তিনি হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর এই বর্ণিত হাদীসের কোথাও প্রতিবাদ করলেন না । বর্ণনার শেষাংশে এসে হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) যখন বর্ণনা করলেন, “আল্লাহ তা‘আলা তাকে বললেনঃ ওসব তোমাকে দেওয়া হলো, আরো তার সমপরিমাণ তার সাথে দেওয়া হল” তখন হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) প্রতিবাদ করে বললেনঃ হে হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ), রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তো বলেছেনঃ তার সাথে আরো দশগুন । তখন হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ আমি সংরক্ষণ করেছি এভাবে-ওসব তোমাকে দেওয়া হল, আর এর সাথে আরো এক গুণ দেওয়া হল । আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বললেনঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছ থেকে এভাবে সংরক্ষণ করেছি -- ও সবই তোমাকে দেওয়া হল এর সাথে তোমাকে দেওয়া হল আরো দশ গুণ । হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ এই হচ্ছে জান্নাতে প্রবেশকারীদের মধ্যে সর্বশেষ ব্যাক্তি ।

হাদিস নং: ৬৯৩২ (জাহমিয়াদের মতের খন্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ অধ্যায়)

৬৯৩২/৬৫: ইয়াহইয়া ইব্ন বুকায়র (রহঃ) . . . . . হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, আমরা বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ)! আমরা কিয়ামতের দিন আমাদের প্রতিপালকের দর্শন লাভ করব কি? তিনি বললেনঃ মেঘমুক্ত আকাশে তোমরা সুর্য দেখতে কোন বাধা প্রাপ্ত হও কি? আমরা বললাম, না । তিনি বললেনঃ সেদিন তোমরাও তোমাদের প্রতিপালককে দেখতে বাধা প্রাপ্ত হবে না । এতটুকু ব্যতীত যতটুকু সূর্য দেখার সময় পেয়ে থাক । সেদিন একজন ঘোষনাকারী ঘোষণা করবেন, যারা যে জিনিসের ইবাদত করতে, তারা সে জিনিসের কাছে গমন কর । এরপর যারা ক্রুশধারী ছিল, তারা যাবে তাদের ক্রুশের কাছে । মূর্তিপূজারীরা যাবে তাদের মূর্তির সাথে । সকলেই তাদের উপাস্যের সাথে যাবে । অবশিষ্ট থাকবে একমাত্র আল্লাহর ইবাদতকারীরা । নেককার ও গুনাহগার সবাই । এবং আহলে কিতাবের কিছু সংখ্যক লোকও থাকবে । অতঃপর জাহান্নামকে আনা হবে । সেটি তখন থাকবে মরীচিকার মত । ইহুদীদেরকে সম্বোধন করে জিজ্ঞাসা করা হবে, তোমরা কিসের ইবাদত করতে? তারা উত্তর করবে, আমরা আল্লাহর পূত্র উযায়র (আঃ) -এর ইবাদত করতাম । তখন তাদেরকে বলা হবে, তোমরা মিথ্যা বলছ । কারণ আল্লাহ্র কোন স্ত্রীও নেই এবং নেই তার কোন সন্তান । এখন তোমরা কি চাও? তারা বলবে, আমরা চাই, আমাদেরকে পানি পান করান । তখন তাদেরকে বলা হবে, তোমরা পানি পান কর । এরপর তারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হতে থাকবে । তারপর নাসারাদেরকে বলা হবে, তোমরা কিসের ইবাদত করতে? তারা বলে উঠবে, আমরা আল্লাহর পূত্র মসীহের ইবাদত করতাম । তখন তাদেরকে বলা হবে, তোমরা মিথ্যা বলছ । আল্লাহর কোন স্ত্রীও ছিল না, সন্তানও ছিল না । এখন তোমরা কি চাও? তারা বলবে, আমাদের ইচ্ছা আপনি আমাদেরকে পানি পান করতে দিন । তাদেরকে উত্তর দেওয়া হবে, তোমরা পান কর । তারপর তারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হতে থাকবে । পরিশেষে অবশিষ্ট থাকবে একমাত্র আল্লাহর ইবাদতকারীগগ । তাদের নেককার ও গুনাহগার সবাই । তাদেরকে লক্ষ্য করে বলা হবে, কোন জিনিস তোমাদেরকে আটকে রেখেছে? অথচ অন্যরা তো চলে গিয়েছে । তারা বলবে আমরা তো সেদিন তাদের থেকে পৃথক রয়েছি, যেদিন আজকের অপেক্ষা তাদের বেশি প্রয়োজন ছিল । আমরা একজন ঘোষণাকারীর এ ঘোষণানা দিতে শুনেছি যে যারা যাঁদের ইবাদত করত তারা যেন ওদের সাথে যায় । আমরা প্রতীক্ষা করছি আমাদের প্রতিপালকের জন্য । নাবী (সাঃ) বলেনঃ এরপর মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তাদের কাছে আগমন করবেন । এবার তিনি সে আকৃতিতে আগমন করবেন না, যেটিতে তাঁকে প্রথমবার ঈমানদারগণ দেখেছিলেন । এসে তিনি ঘোষণা দিবেন - আমি তোমাদের প্রতিপালক, সবাই তখন বলে উঠবে আপনিই-আমাদের প্রতিপালক । আর সেদিন নাবীগণ ছাড়া তাঁর সঙ্গে কেউ কথা বলতে পারবে না । আল্লাহ তাদেরকে বলবেন, তোমাদের এবং তাঁর মাঝখানে পরিচায়ক কোন আলামত আছে কি? তারা বলবেনঃ পায়ের নলা । তখন পায়ের নলা খূলে দেয়া হবে । এই দেখে ঈমানদারগণ সবাই সিজদায় পতিত হবে । বাকি থাকবে  তারা, যারা লোক-দেখানো এবং লোক-শোনানো সিজদা করেছিল । তবে তারা সিজদার মনোবৃত্তি নিয়ে সিজদা করার জন্য যাবে, কিন্তু তাদের মেরু-দন্ড একটি তক্তার ন্যায় শক্ত হয়ে যাবে । এমন সময় পুল স্হাপন করা হবে জাহান্নামের উপর । সাহাবীগন আরয করলেন, সে পূলটি কি ধরনের হবে ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ)? তিনি বললেনঃ দুর্ঘম পিচ্ছিল জায়গা । এর ওপর আংটা ও হুক থাকবে, শক্ত চওড়া উল্টো কাঁটা বিশিষ্ট হবে, যা নাজদ দেশের সাদান বৃক্ষের কাটার মত হবে । সে পূলের উপর দিয়ে ঈমানদারগণের কেউ অতিক্রম করবে চোখের পলকের মতো, কেউ বিজলীর মতো, কেউ বা বাতাসের মতো আবার কেউ তীব্রগামী ঘোড়া ও সাওয়ারের মতো ।
তবে মুক্তি প্রাপ্তগণ কেউ নিরাপদে চলে আসবেন, আবার কেউ জাহান্নামের আগুনে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাবে । একবারে শেষে পার হবে যে ব্যাক্তিটি, সে হেঁচড়িয়ে কোন রকমে পার হয়ে আসবে । এখন তোমরা হকের ব্যাপারে আমার অপেক্ষা বেশি কঠোর নও, যতটুকু সেদিন ঈমানদারগণ আল্লাহর সমীপে হয়ে থাকবে, যা তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে গিয়েছে । যখন ঈমানদারগন এই দৃশ্যটি অবলোকন করবে যে, তাদের ভাইদেরকে রেখে একমাত্র তারাই নাজাত পেয়েছে, তখন তারা বলবে, হে আমাদের রব! আমাদের সেসব ভাই কোথায়, যারা আমাদের সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করত, রোযা পালন করত, নেক কাজ করত? তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে বলবেনঃ তোমরা যাও, যাদের অন্তরে এক দীনার বরাবর ঈমান পাবে, তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে আন । আল্লাহ তা‘আলা তাদের মুখমন্ডল জাহান্নামের ওপর হারাম করে দিয়েছেন । এদের কেউ কেউ দু-পা ও দু-পায়ের নলার অধিক পর্যন্ত জাহান্নামের মধ্যে থাকবে । তারা যাদেরকে চিনতে পারে, তাদেরকে বের করবে । তারপর এরা আবার প্রত্যাবর্তন করবে । আল্লাহ আবার তাদেরকে বলবেনঃ- তোমরা যাও, যাদের অন্তরে অর্ধ দীনার পরিমাণ ঈমান পাবে তাদেরকে বের করে নিয়ে আসবে । তারা গিয়ে তাদেরকেই বের করে নিয়ে আসবে যাদেরকে তারা চিনতে পারবে । তারপর আবার প্রত্যাবর্তন করবে । আল্লাহ তাদেরকে আবার বলবেন, তোমরা যাও, যাদের অন্তরে অনু পরিমাণ ঈমান পাবে, তাদেরকে বের করে নিয়ে আসবে । তারা যাদেরকে চিনতে পাবে তাদেরকে বের করে নিয়ে আসবে । বর্ণনাকারী হযরত আবূ সাঈদ খূদরী (রাঃ) বলেনঃ তোমরা যদি আমাকে বিশ্বাস না কর, তাহলে আল্লাহর এ বানীটি পড়ঃ “আল্লাহ অণু পরিমানও জুলুম করেন না । এবং অণু পরিমান পূণ্য কাজ হলেও আল্লাহ তাকে দ্বিগুণ করেন (৪- ৪০)।” তারপর নাবী (সাঃ), ফেরেশতা ও মুমিনগণ সুপারিশ করবেন । তখন মহান পরাক্রমশালী আল্লাহ বলবেন, এখন একমাত্র আমার শাফাআতই অবশিষ্ট রয়েছে । তিনি জাহান্নাম থেকে একমুষ্টি ভরে এমন কতগুলো কাওমকে বের করবেন, যারা জ্বলে পূড়ে দগ্ধ হয়ে গিয়েছে । তারপর তাদেরকে বেহেশতের সামনে অবস্হিত ‘হায়াত’- নামক নহরে ঢালা হবে। তারা সে নহরের দু‘পার্শ্বে এমনভাবে উদ্ভূত হবে, যেমন পাথর এবং গাছের কিনারে বহন করে আনা আবর্জনায় বীজ থেকে তৃণ উদ্ভূত হয় । দেখতে পাও তন্মধ্যে সূর্যের আলোর অংশের গাছগুলো সাধারণত সবুজ হয়, ছায়ার অংশেরগুলো সাদা হয় । তারা সেখান থেকে মুক্তার দানার মত বের হবে । তাদের গর্দানে মোহর লাগানো হবে । জান্নাতে তারা যখন প্রবেশ করবে, তখন অপরাপর জান্নাতবাসীরা বলবেন, এরা হলেন রাহমান কর্তৃক মুক্তিপ্রাপ্ত যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা কোন নেক আমল কিংবা কল্যাণ কাজ ছাড়া জান্নাতে দাখিল করেছেন । তখন তাদেরকে ঘোষনা দেয়া হবেঃ তোমরা যা দেখেছ, সবই তো তোমাদের এর সাথে আরো সমপরিমান দেওয়া হল তোমাদেরকে ।
হাজ্জাজ ইব্ন মিনহাল (রহঃ) . . . . . হযরত আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত । নাবী (সাঃ) বলেছেনঃ ঈমানদারদেরকে কিয়ামতের দিন আবদ্ধ করে রাখা হবে । পরিশেষে তারা পেরেশান হয়ে ওঠবে এবং বলবে, আমরা যদি আমাদের রবের কাছে কারো দ্বারা শাফাআত করাই যিনি আমাদের স্বস্তি দান করেন । তারপর তারা আদম (আঃ) -এর কাছে এসে বলবে, আপনিই তো সে আদম, যিনি মানবকুলের পিতা, স্বয়ং আল্লাহ্ আপন কুদরতের হাত দিয়ে আপনাকে সৃষ্টি করেছেন । আপনাকে বসবাসের সুযোগ প্রদান করেছেন তাঁর জান্নাতে, ফেরেশতাদের দ্বারা আপনাকে সিজদা করিয়েছেন এবং আপনাকে সব জিনিসের নামের তালীম দিয়েছেন । আমাদের এ স্হান থেকে নিস্কৃতি প্রদানের নিমিত্তে আপনার সেই রবের কাছে শাফাআত করুন । তখন আদম (আঃ) বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের জন্য নই । নাবী (সাঃ) বলেনঃ এরপর তিনি নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়ার ভুলের কথাটি উল্লেখ করবেন । তিনি বলবেন, বরং তোমরা নূহ (আঃ) -এর কাছে যাও, যিনি পৃথিবীবাসীদের প্রতি প্রেরিত নাবীগণের মধ্যে প্রথম নাবী (সাঃ) । তারপর তারা নূহ (আঃ) -এর কাছে এলে তিনি তাদেরকে বলবেন আমি তোমাদের এ কাজের জন্য নই । আর তিনি না জেনে তাঁর রবের কাছে প্রার্থনার ভুলটি উল্লেখ করবেন এবং বলবেন বরং তোমরা রাহমানের সুহৃদ বন্ধু ইবরাহীম (আঃ) এর কাছে যাও । নাবী (সাঃ) বলেনঃ অতঃপর তারা ইবরাহীম (আঃ) -এর কাছে আসবে । তখন ইবরাহীম (আঃ) বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের জন্য নই । আর তিনি এরুপ তিনটি বাক্যের কথা উল্লেখ করবেন যেগুলো বাহ্যত বাস্তব-পরিপন্হী ছিল । পরে বলবেন, তোমরা বরং মূসা (আঃ) -এর কাছে যাও । তিনি আল্লাহ্র এমন এক বান্দা যাকে আল্লাহ্ তাওরাত দান করেছিলেন, তাঁর সাথে কথা বলেছিলেন এবং গোপন বাক্যালাপের মাধ্যমে তাঁকে সান্নিধ্য দান করেন । রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ সবাই তখন মূসা (আঃ) -এর কাছে আসবে । তিনিও বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের জন্য নই । এবং তিনি (অনিাচ্ছাকৃত) হত্যার ভুলের কথা উল্লেখ করবেন । তিনি বলবেন, তোমরা বরং ঈসা (আঃ) -এর কাছে যাও । যিনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসুল এবং তাঁর রুহ ও বানী । রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ তারা সবাই তখন ঈসা (আঃ) -এর কাছে আসবে । ঈসা (আঃ) বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের জন্য নই । তিনি বলবেন, তোমরা বরং মুহাম্মদ (সাঃ) -এর কাছে যাও । তিনি আল্লাহ্র এমন এক বান্দা যাঁর পূর্বের ও পরের ভূল মাফ করে দিয়েছেন । রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ তারা তখন আমার কাছে আসবে । আমি তখন আমার রবের কাছে তাঁর দরবারে হাযির হওয়ার অনুমতি চাইব । আমাকে তাঁর কাছে যাওয়ার অনুমতি প্রদান করা হবে । তাঁর দর্শন লাভ করার সাথে সাথে আমি সিজদায় পড়ে যাবো । তিনি আমাকে সে অবস্থায় যতক্ষন রাখতে চাইবেন ততক্ষন বাখবেন । এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, মুহাম্মাদ, মাথা ওঠান; বলুন, আপনার কথা শোনা হবে, আর শাফাআত করুন, কবুল করা হবে, চান আপনাকে দেওয়া হবে । রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ তখন আমি আমার মাথা ওঠাবো । তারপর আমি আমার প্রতিপালকের এমন স্তুতি ও প্রশংসা (হামদ ও সানা) করবো যা তিনি আমাকে শিখিয়ে দিবেন । এরপর আমি সুপারিশ করবো, তবে আমার জন্য একটা সীমা নির্ধারণ করা হবে । আমি বের হয়ে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবো । বর্ণনাকারী কাতাদা (রহঃ) বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে এ কথাও বলতে শুনেছি যে, আমি বের হবো এবং তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করবো এবং জান্নাতে প্রবেশ করাব । তারপর আমি ফিরে এসে আমার প্রতিপালকের দরবারে হাযির হওয়ার অনুমতি চাইব । আমাকে অনুমতি দেওয়া হবে । আমি তাঁকে দেখার পর সিজদায় পড়ে যাব । আল্লাহ তা‘আলা যতক্ষন রাখতে চাইবেন, আমাকে সে অবস্হায় রাখবেন । তারপর বলবেন, মুহাম্মদ! মাথা উঠান। বলুন, তা শোনা হবে, শাফাআত করুন, কবুল করা হবে, চান দেওয়া হবে । রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ তারপর আমি আমার মাথা উথাবো । আমার রবের এমন প্রশংসা ও স্তুতি করব, যা তিনি আমাকে শিখিয়ে দিবেন । রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ এরপর আমি শাফাআত করব, আমার জন্য একটা সীমা নির্ধারণ করা হবে । আমি বের হয়ে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাব । বর্ণনাকারী কাতাদা (রহঃ) বলেনঃ আমি হযরত আনাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, নাবী (সাঃ) বলেছেনঃ তখন আমি বের হব এবং তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করব এবং জান্নাতে প্রবেশ করাব। তারপর তৃতীয়বারের মত ফিরে আসব এবং আমার রবের দরবারে প্রবেশ করার অনুমতি চাইব । আমাকে অনুমতি দেওয়া হবে । আমি তাঁকে দেখার পর সিজদায় পড়ে যাব । আল্লাহ্ আমাকে সে অবস্থায় রাখবেন, যতক্ষন তিনি চাইবেন । তারপর আল্লাহ বলবেন, মুহাম্মাদ! মাথা উঠান এবং বলুন, শোনা হবে, সুপারিশ করুন, তা কবুল করা হবে, চান, দেওয়া হবে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ আমি মাথা উঠিয়ে আমার রবের এমন স্তুতি ও প্রশংসা (হামদ ও সানা) করব, যা আমাকে শিখিয়ে দেবেন । রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ এরপর আমি শাফাআত করব, আমার জন্য একটা সীমা নির্ধারন করা হবে । তারপর আমি বের হয়ে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাব । বর্ণনাকারী কাতাদা (রহঃ) বলেনঃ আমি হযরত আনাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, নাবী (সাঃ) বলেছেনঃ আমি সেখান থেকে বের হয়ে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করাব । পরিশেষে জাহান্নামে অবশিষ্ট থাকবে একমাত্র তারা । কুরআন যাদেরকে আটকে রেখেছে । অর্থা যাদের ওপর জাহান্নামের স্হায়ীবাস অপরিহার্য হয়ে পড়েছে । হযরত আনাস (রাঃ) বলেনঃ তিনি কুরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন । মহান আল্লাহর বানীঃ “আশা করা যায় তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে (১৭-৭৯) এবং তিনি বললেনঃ তোমাদের নাবী (সাঃ) -এর জন্য প্রতিশ্রুত ‘মাকামে মাহমূদ’ হচ্ছে এটিই ।

হাদিস নং: ৬৯৩৩ (জাহমিয়াদের মতের খন্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ অধ্যায়)

৬৯৩৩/৬৬: উবায়দুল্লাহ ইব্ন সা’দ ইব্ন ইবরাহীম (রহঃ) . . . . . হযরত আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আনসারদের কাছে (লোক) পাঠালেন । তাদেরকে একটা তাঁবুর মধ্যে সমবেত করলেন এবং তাদের বললেনঃ তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সঙ্গে মুলাকাত পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করবে । আমি হাওযের (কাওসারের) কাছে থাকব ।

হাদিস নং: ৬৯৩৪ (জাহমিয়াদের মতের খন্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ অধ্যায়)

৬৯৩৪/৬৭: সাবিত ইব্ন মুহাম্মাদ (রহঃ) . . . . . হযরত ইব্ন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেনঃ নাবী (সাঃ) রাতে যখন তাহাজ্জুদের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন, তখন বলতেনঃ হে আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ! সব প্রশংসা একমাত্র আপনারই, আসমান ও যমীনের তত্ত্বাবধায়ক আপনিই এবং আপনারই জন্য সব স্তুতি । আসমান ও যমীন এবং এসবের মধ্যকার সবকিছুর প্রতিপালক আপনিই এবং আপনারহঁ জন্য সব প্রশংসা । আসমান যমীন ও এগুলোর মধ্যকার সব কিছুর নূর আপনিই । আপনি হক, আপনার বাণী হক, আপনার ওয়াদা হক, আপনার সাক্ষা হক, জান্নাত হক, জাহান্নাম হক এবং কিয়ামত হক । ইয়া আল্লাহ! আপনারই উদ্দেশ্যে আমি ইসলাম কবুল করেছি এবং আপনারই প্রতি ঈমান এনেছি, তাওয়াক্কূল করেছি আপনারই ওপর, আপনারই কাছে বিবাদ হাওয়ালা করেছি, আপনারই কাছে ফায়সালা চেয়েছি । তাই আপনি আমার পূর্বের ও পরের গুপ্ত ও প্রকাশ্য এবং যা আপনি আমার চাইতে বেশি জ্ঞাত তা সবই মাফ করে দিন । আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই । বর্ননাকারী তাঊস (রহঃ) থেকে কায়স ইব্ন সা’দ (রহঃ) এবং আবূ যুবায়র (রহঃ) ‘কায়্যুম’-এর এর স্থলে ‘কায়্যাম’ বর্ননা করেছেন । বর্ননাকারী মুজাহিদ বলেনঃ ‘কায়্যুম’ সবকিছু পরিচালককে বলা হয়ে থাকে । উমর (রাঃ) ‘কায়্যাম’ পড়েছেন । মূলত শব্দ উভয়টিই প্রশংসার জন্য ব্যবহত হয় ।

হাদিস নং: ৬৯৩৫ (জাহমিয়াদের মতের খন্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ অধ্যায়)

৬৯৩৫/৬৮: ইউসুফ ইব্ন মূসা (রহঃ) . . . . . হযরত আদী ইব্ন হাতিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকের সাথে অচিরেই তার প্রতিপালক আলাপ করবেন তখন প্রতিপালক ও তার মাঝখানে কোন দোভাষী ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী পর্দাও থাকবে না ।

হাদিস নং: ৬৯৩৬ (জাহমিয়াদের মতের খন্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ অধ্যায়)

৬৯৩৬/৬৯: আলী ইব্ন আবদুল্লাহ (রহঃ) . . . . . হযরত কায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি নাবী (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন । নাবী (সাঃ) বলেছেনঃ দুটি জান্নাত এমন হবে, সেগুলোর পানপাত্র ও অভ্যন্তরস্থ সব কিছুই হবে রূপার । আর দুটি জান্নাত এমন হবে, সেগুলোর পানপাত্র ও অভ্যন্তরস্থ সবকিছুই হবে স্বর্ণের । জান্নাতে আদনে তাদের ও তাদের প্রতিপালকের দর্শনের মধ্যে তাঁর চেহারার গর্বের চাঁদর ছাড়া আর কোন কিছু অন্তরায় থাকবে না ।

হাদিস নং: ৬৯৩৭ (জাহমিয়াদের মতের খন্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ অধ্যায়)

৬৯৩৭/৭০: হুমায়দী (রহঃ) . . . . . হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি মিথ্যা কসম করে কোন মুসলমানের সম্পদ আত্মসা করবে, সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সাথে মিলিত হবে এমতাবস্হায় যে, তিনি তার ওপর রাগান্বিত থাকবেন । হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর বাণীর সমর্থনে আল্লাহ্র কিতাবের আয়াত তিলাওয়াত করেনঃ “যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছমূল্যে বিক্রয় করে, পরকালে তাদের কোন অংশ নেই । কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না . . . . (৩-৭৭)।”

হাদিস নং: ৬৯৩৮ (জাহমিয়াদের মতের খন্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ অধ্যায়)

৬৯৩৮/৭১: আবদুল্লাহ ইব্ন মুহাম্মাদ (রহঃ) . . . . . হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, নাবী (সাঃ) বলেছেনঃ তিন প্রকারের মানুষ, যাদের সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ কথা বলবেন না এবং তাদের দিকে তাকাবেনও না । যে ব্যাক্তি তার দ্রব্যের উপর এই মিথ্যা কসম করে যে, একে এখন যে মূল্যে দেওয়া হল এর চেয়ে অধিক মূল্যে তা বিক্রয় করা যাচ্ছিল । (২) যে ব্যাক্তি কোন মুসলমানের মাল আত্মসা করার উদ্দেশ্যে আসরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর মিথ্যা কসম করে । (৩) এবং এক ব্যাক্তি সে, যে প্রযোজনের অতিরিক্ত পানি আটকিয়ে রাখে । আল্লাহ তা‘আলা তাকে লক্ষ্য করে কিয়ামতের দিন বলবেন, আজ আমি আমার মেহেরবানী থেকে তোমাকে বঞ্চিত করব, যেমনি তুমি যা তোমার হাতের অর্জিত নয় তা থেকে বিমুখ করতে ।

হাদিস নং: ৬৯৩৯ (জাহমিয়াদের মতের খন্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ অধ্যায়)

৬৯৩৯/৭২: মুহাম্মাদ ইব্ন মূসান্না (রহঃ) . . . . . হযরত আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী (সাঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ আসমান ও যমীনকে যেদিন সৃষ্টি করেছিলেন, সেদিনকার অবস্হায় যামানা পূনরায় প্রত্যবর্তন করেছে । বারটি মাসে এক বছর হয় । তন্মধ্যে চারটি মাস (বিশেষভাবে) মর্যাদাসম্পন্ন । যুলকাদা, যুলহাজ্জ (হজ্জ) ও মুহাররম এই তিনটা মাস একাধারে এসে থাকে । আর মুযার গোত্রের রজব মাস যা জুমাদা ও শাবান মাসের মাঝে । তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এটি কোন মাস? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তার রাসূলই ভালো জানেন । এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) চুপ থাকলেন, যদ্দরূন আমরা ভেবে ছিলাম, তিনি এই নামটি পাল্টিয়ে অন্য কোন নাম রাখবেন । তিনি বললেনঃ এটি কি যুলহাজ্জ (হজ্জ) নয়? আমরা উত্তর করলাম, হ্যা, এটি যুলহাজ্জার (হজ্জ) মাস । তিনি বললেনঃ এটি কোন শহর? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই বেশি ভাল জানেন । তিনি নীরব রইলেনঃ আমরা ভেবেছিলাম তিনি হয়ত শহরটির নাম পাল্টিয়ে অন্য কোন নাম রেখে দিবেন । তিনি বললেনঃ এটি কি সেই (পবিত্র) শহরটি নয়? আমরা উত্তর করলাম, হ্যা । তারপর তিনি পূনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, আজকের এই দিনটি কোন দিন? আমরা উত্তর করলাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই বেশি ভাল জানেন । তিনি নীরব রইলেন যার দরূন আমরা ভাবলাম তিনি সম্ভবত এর নামটা পাল্টিয়েই দিবেন । তিনি বললেনঃ এটি কি কুরবানীর দিন নয়? আমরা -বললাম, হ্যা । নাবী (সাঃ) তখন বললেনঃ তোমাদের রক্ত এবং সম্পদ বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ ইব্ন সীরীন (রহঃ) বলেছেন,  আমার ধারণা হচ্ছে, হযরত আবূ বাকরা (রাঃ) “তোমাদের ইজ্জত” কথাটিও বর্ণনা করেছিলেন, অর্থা ওসব এ পবিত্র দিনে, এ পবিত্র শহরে, এ পবিত্র মাসটির ন্যায় পবিত্র ও মর্যাদা সম্পন । এবং অতিশীঘ্রই তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের সাক্ষা লাভ করবে । তখন তিনি তোমাদেরকে তোমাদের আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন । সাবধান! আমার ওফাতের পরে তোমরা পথভ্রষ্ট হয়ে একে অপরকে হত্যা করো না । সাবধান! উপস্থীতগণ অনুপস্হিত লোকদের কাছে (কথাগুলো) পৌছিয়ে দেবে । কেননা, হয়ত যার কাছে (রেওয়াত) পৌছানো হবে, তাদের মধ্যে এমন ব্যাক্তিও থাকবে, যারা (রেওয়াত) প্রত্যক্ষ শ্রোতার চাইতে বেশি সংরক্ষণকারী হবে । মুহাম্মাদ ইব্ন সীরীন (রহঃ) যখন এ হাদীসটি বর্ণনা করতেন, তখন বলতেন, নাবী (সাঃ) সত্যিই বলেছিলেন । অতঃপর নাবী (সাঃ) বললেনঃ আমি পৌছিয়ে দিয়েছি কি? আমি পৌছিয়ে দিয়েছি কি?

হাদিস নং: ৬৯৪০ (জাহমিয়াদের মতের খন্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ অধ্যায়)

৬৯৪০/৭৩: মূসা ইব্ন ইসমাঈল (রহঃ) . . . . . হযরত উসামা ইব্ন যায়িদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেছেন, নাবী (সাঃ) -এর জনৈকা কন্যার এক ছেলের জীবনসায়াহ্নে তাঁর কন্যা নাবী (সাঃ) -কে যাওয়ার জন্য (অনুরোধ করে) একজন লোক পাঠালেন । উত্তরে নাবী (সাঃ) বলেছিলেনঃ আল্লাহ যা নিয়ে নেন এবং যা দান করেন সবই তাঁরই জন্য । আর প্রতিটি বস্তুর জন্য একটা সময়সীমা নির্ধারিত রয়েছে । সুতরাং সে যেন সবর করে এবং সাওয়াবের আশা করে । তারপর নাবী (সাঃ)-তনয়া নাবী (সাঃ) -কে পূনরায় যাওয়ার জন্য কসম দিয়ে লোক পাঠালেন । তিনি যাওয়ার জন্য ওঠে দাঁড়ালেন । বর্ণনাকারী হযরত উসামা ইব্ন যায়িদ (রাঃ) বলেন, আমি, মু’আয ইব্ন জাবাল, উবায় ইব্ন কাব, উবাদা ইব্ন সামিত ও তাঁর সঙ্গে যাওয়ার জন্য ওঠে দাঁড়ালাম । আমরা যখন সেখানে গিয়ে প্রবেশ করলাম তখন তারা বাচ্চাটাকে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) -এর কাছে দিলেন । অথচ তখন বাচ্চার বুকের মধ্যে এক অস্বস্তি বোধ হচ্ছিল । বর্ণনাকারী বলেন, আমার ধারণা নাবী (সাঃ) তখন বলেছিলেনঃ এ তো যেন মশকের মত । এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কাঁদলেন । তা দেখে হযরত সা’দ ইব্ন উবাদা (রাঃ) বললেনঃ আপনি কাঁদছেন? তিনি বললেনঃ অবশ্যই আল্লাহ তাঁর দয়ালু বান্দাদের প্রতিই দয়া প্রদর্শন করে থাকেন ।

হাদিস নং: ৬৯৪১ (জাহমিয়াদের মতের খন্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ অধ্যায়)

৬৯৪১/৭৪: উবায়দুল্লাহ্ ইব্ন সা’দ ইব্ন ইবরাহিম (রহঃ) . . . . . হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত । নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাত ও জাহান্নাম উভয়টি স্বীয় প্রতিপালকের কাছে অভিযোগ করল । জান্নাত বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমার ব্যাপারটি কি হলো যে তাতে শুধু নিঃস্ব ও নিম্ন শ্রেনীর লোকেরাই প্রবেশ করবে । এদিকে জাহান্নামও অভিযোগ করল অর্থা আপনি শুধুমাত্র অহংকারীদেরকেই আমাতে প্রাধান্য দিলেন । আল্লাহ্ জান্নাতকে লক্ষ্য করে বললেনঃ তুমি আমার রহমত । জাহান্নামকে বললেনঃ তুমি আমার আযাব । আমি যাকে চাইব, তোমাকে দিয়ে শাস্তি পৌছাব । তোমাদের উভয়কেই পূর্ন করা হবে । তবে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৃষ্টির কারো উপর যুলম করবেন না । তিনি জাহান্নামের জন্য নিজ ইচ্ছানূযায়ী নতুন সৃষ্টি পয়দা করবেন । তাদেরকে যখন জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, তখন জাহান্নাম বলবে, আরো অতিরিক্ত আছে কি? জাহান্নামে আরো নিক্ষেপ করা হবে, তখনো বলবে, আরো অতিরিক্ত আছে কি? এভাবে তিনবার বলবে । পরিশেষে আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর কুদরতেরকদম (পা) জাহান্নামে প্রবেশ করিয়ে দিলে তা পরিপূর্ন হয়ে যাবে । তখন জাহান্নামের একটি অংশ আরেকটি অংশকে এই উত্তর করবে যথেষ্ট হয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে, ষথেষ্ট হয়েছে ।

হাদিস নং: ৬৯৪২ (জাহমিয়াদের মতের খন্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ অধ্যায়)

৬৯৪২/৭৫: হাফস ইব্ন উমর (রহঃ) . . . . . হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত । নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কতিপয় কাওম তাদের গুনাহর কারণে শাস্তিস্বরুপ জাহান্নামের অগ্নিশিখায় পৌছবে । তারপর আল্লাহ তা‘আলা নিজ করূণার বদৌলতে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেবেন । তাদেরকে জাহান্নামী বলে আখ্যায়িত করা হবে । হাম্মাম (রহঃ) . . . . . হযরত আনাস (রাঃ) সুত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম - থেকে উক্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন ।

হাদিস নং: ৬৯৪৩ (জাহমিয়াদের মতের খন্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ অধ্যায়)

৬৯৪৩/৭৬: মূসা (রহঃ) . . . . . হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেনঃ এক ইহুদী পণ্ডিত রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর কাছে এসে বললঃ হে মুহাম্মাদ (সাঃ)! আল্লাহ্ কিয়ামতের দিন আসমানকে এক আঙ্গুলের ওপর, পৃথিবীকে এক আঙ্গুলের ওপর, পর্বতমালাকে একটি আঙ্গুলের ওপর, বৃক্ষলতা ও নদীনালাকে আরেকটি আঙ্গুলের ওপর এবং সকল সৃষ্টিকে এক আঙ্গুলের ওপর রেখে দিবেন । এবং নিজ হাতে ইশারা দিয়ে বলবেন, সম্রাট একমাত্র আমিই । এর সাথে সাথে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) হাসলেন এবং বললেনঃ “তারা আল্লাহর যথার্থ মর্যাদা উপলদ্ধি করেনি (৬- ৯১)” ।

হাদিস নং: ৬৯৪৪ (জাহমিয়াদের মতের খন্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ অধ্যায়)

৬৯৪৪/৭৭: সাঈদ ইব্ন আবূ মারিয়াম (রহঃ) . . . . . হযরত ইব্ন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেনঃ আমি একদা হযরত মায়মুনা (রাঃ)-এর ঘরে রাত যাপন করলাম । তখন নাবী (সাঃ) তাঁর কাছে ছিলেন । রাতে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর সালাত (নামায/নামাজ) কিরুপ হয় তা প্রত্যক্ষ করার জন্য । রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তাঁর পরিবারের সাথে কিছু সময় কথা বললেন এবং ঘুমিয়ে পড়লেন । এরপর যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ কিংবা শেষের কিছু অংশ অবশিষ্ট রইল, তিনি উঠে বসলেন এবং আসমানের দিকে তাকিয়ে তিলাওয়াত করলেনঃ “আকাশ সমুহ ও পৃথিবী সৃষ্টিতে . . . . . বোধশক্তি সম্পন্ন লোকদের জন্য (৩-১৯০) পর্যন্ত । তারপর তিনি উঠে পিয়ে ওযূ ও মিসওয়াক করলেন । অতঃপর এগার রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন । হযরত বিলাল (রাঃ) সালাত (নামায/নামাজ)-এর (ফজরের) আযান দিলে তিনি দু-রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) পড়ে নিলেন । এরপর নাবী (সাঃ) বের হয়ে সাহাবাদেরকে ফজরের (দু-রাকআত) সালাত (নামায/নামাজ) পড়িয়ে দিলেন ।

হাদিস নং: ৬৯৪৫ (জাহমিয়াদের মতের খন্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ অধ্যায়)

৬৯৪৫/৭৮: ইসমাঈল (রহঃ) . . . . . হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা যখন (সৃষ্টির) কাজ সম্পূর্ণ করলেন, তখন তার নিকটে তাঁর আরশের উপর লিপিবদ্ধ করে দিলেন, “আমার রহমত আমার ক্রোধের উপর প্রবল হয়েছে ।”

হাদিস নং: ৬৯৪৬ (জাহমিয়াদের মতের খন্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ অধ্যায়)

৬৯৪৬/৭৯: আদম (রহঃ) . . . . . হযরত আবদুল্লাহ্ ইব্ন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্নিত । তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) যিনি ‘সত্যবাদী’ এবং ‘সত্যবাদী বলে স্বীকৃত’ আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে, তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টি হলো এরুপ বীর্য থেকে যাকে মায়ের পেটে চল্লিশ দিন কিংবা চল্লিশ রাত একত্রিত রাখা হয় । তারপর অনুরুপ সময়ে আলাক হয়, তারপর অনুরুপ সময়ে গোশতপিন্ডে পরিণত হয় । তারপর আল্লাহ্ তা‘আলা তার কাছে ফেরেশতা প্রেরণ করেন । এই ফেরেশতাকে চারটি জিনিস সম্পর্কে লিপিবদ্ধ করার জন্য হুকুম দেয়া হয় । যার ফলে ফেরেশতা তার রিযিক, আমল, আয়ু এবং সৌভাগ্য কিংবা হতভাগ্য হওয়া সম্পর্কে লিখে দেয় । তারপর তার মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করা হয় । এজন্যই তোদের কেউ জান্নাতীদের আমল করে এতটুকু অগ্রগামী হয়ে যায় যে, তার ও জান্নাতের মাঝখানে মাত্র এক গজের দূরত্ব থাকতেই তার ওপর লিখিত তাকদীর প্রবল হয়ে যায় । তখন সে দোযখীদের আমল করে । পরিশেষে সে দোযখেই প্রবেশ করে । আবার তোমাদের কেউ দোযখীদের ন্যয় আমল করে এমন পর্যায়ে পৌছে যে, তার ও দোযখের মধ্যে মাত্র এক গজের দূরত্ব থাকতে তার উপর তাকদীরের লেখনী প্রবল হয়, যদ্দরুন সে জান্নাতীদের ন্যায় আমল করে, ফলে জান্নাতেই প্রবেশ করে ।

হাদিস নং: ৬৯৪৭ (জাহমিয়াদের মতের খন্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ অধ্যায়)

৬৯৪৭/৮০: খাল্লাদ ইব্ন ইয়াহইয়া (রহঃ) . . . . . হযরত ইব্ন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেনঃ নাবী (সাঃ) জিবরাঈল (আঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন- হে জিবরাঈল (আঃ)! আপনি আমাদের সাথে যে পরিমাণ সাক্ষা করেন, তার চাইতে অধিক সাক্ষা করতে কিসে বাধা দেয়? এরই প্রেক্ষিতে কুরআনের নিন্নোক্ত আয়াত অবতীর্ন হয়ঃ “আমরা আপনার প্রতিপালকের আদেশ ব্যতীত অবতরণ করব না, যা আমাদের সন্মুখে ও পিছনে আছে এবং যা এ দুয়ের অন্তবর্তী তা তাঁরই । আর আপনার প্রতিপালক ভুলবার নন . . . . . (৯৯- ৬৪)” । হযরত আবদুল্লাহ্ ইব্ন আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ এটি মুহাম্মাদ (সাঃ) এর প্রশ্নের জবাব ।

হাদিস নং: ৬৯৪৮ (জাহমিয়াদের মতের খন্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ অধ্যায়)

৬৯৪৮/৮১: ইয়াহইয়া (রহঃ) . . . . . হযরত আবদুল্লাহ ইব্ন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) -এর সাথে মদিনায় একটি কৃষিক্ষেত দিয়ে চলছিলাম । রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) -তখন একটি খেজুরের ডালের উপর ভর দিয়ে চলছিলেন । তারপর তিনি যখন ইহুদীদের এক গোত্রের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তারা একে অপরকে বলতে লাগল, তাঁকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা কর । আবার কেউ কেউ বলল, তাঁকে কিছু জিজ্ঞাসা করো না । পরিশেষে তাঁরা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল । তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) খেজুরের শাখার ওপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন । তখন আমি তাঁর পেছনেই ছিলাম । আমি ধারণা করছিলাম, তাঁর ওপর ওহী অবতীর্ণ হচ্ছে । পরে তিনি বললেনঃ “তোমাকে ওরা রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করে, বল, রূহ আমার প্রতিপালকের আদেশ ঘটিত । এবং তোমাদের সামান্য জ্ঞানই দেওয়া হয়েছে (১৭-৮৫)।” তখন তাদের একজন আরেকজনকে বলতে লাগল, বলেছিলাম তোমাদেরকে তাঁকে কোন প্রশ্ন করো না ।

হাদিস নং: ৬৯৪৯ (জাহমিয়াদের মতের খন্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ অধ্যায়)

৬৯৪৯/৮২: ইসমাঈল (রহঃ) . . . . . হযরত আবূ হুরাহারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত । রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ্ এর রাস্তায় জিহাদের উদ্দেশ্য নিয়ে যে ব্যাক্তি বের হয়, আর আল্লাহ্ এর রাস্তায় জিহাদ এবং তাঁর কালেমার বিশ্বাসই যদি তাকে বের করে থাকে, এমন ব্যাক্তির জন্য আল্লাহ্ স্বয়ং যিম্মাদার হয়ে যান । হয়তো তাকে তিনি জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, নয়তো যে স্হান থেকে সে বের হয়েছিল সাওয়াব কিংবা গনীমতসহ তাকে সে স্থানে প্রত্যাবর্তন করাবেন ।

হাদিস নং: ৬৯৫০ (জাহমিয়াদের মতের খন্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ অধ্যায়)

৬৯৫০/৮৩: মুহাম্মাদ ইব্ন কাসীর (রহঃ) . . . . . হযরত আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, জনৈক ব্যাক্তি নাবী (সাঃ) এর কাছে এসে বলল, কেউ লড়াই করছে মর্যাদার জন্য, কেউ বীরত্বের জন্য, কেউ লোক দেখানোর জন্য । এদের কার লড়াইটা আল্লাহর পথে হচ্ছে? নাবী (সাঃ) বললেনঃ যে ব্যাক্তি আল্লাহ্ এর বাণীকে বুলন্দ রাখার জন্য লড়াই করছে, সেটাই আল্লাহর পথে ।

হাদিস নং: ৬৯৫১ (জাহমিয়াদের মতের খন্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ অধ্যায়)

৬৯৫১/৮৪: শিহাব ইব্ন আব্বাদ (রহঃ) . . . . .  মুগীরা ইব্ন শুবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, আমার উম্মতের মধ্যে এমন একটি দল থাকবে, যারা আল্লাহ্ এর হুকুম আসা পর্যন্ত অন্যান্য লোকের বিরুদ্ধে সর্বদাই জয়ী থাকবে ।

হাদিস নং: ৬৯৫২ (জাহমিয়াদের মতের খন্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ অধ্যায়)

৬৯৫২/৮৫: হুমায়দী (রহঃ) . . . . . হযরত মুআবিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, আমার উম্মত থেকে একটি দল সব সময় আল্লাহর হুকুমের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে । যারা তাদেরকে মিথ্যুক প্রতিপন্ন করতে চাইবে কিংবা বিরোধিতা করবে, তারা এদের কোন প্রকার ক্ষতি সাধন করতে পারবে না । কিয়ামত আসা পর্যন্ত তারা এ অবস্হায় থাকবে । মালিক ইব্ন ইয়ুখামির (রহঃ) বলেন, আমি হযরত মু’আয (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, তাঁরা হবে সিরিয়ার অধিবাসী । হযরত মুআবিয়া (রাঃ) বলেন, মালিক ইব্ন ইয়ুখামির (রাঃ) বলেন, তিনি হযরত মু’আয (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন, তাঁরা হবে সিরিয়ার ।

হাদিস নং: ৬৯৫৩ (জাহমিয়াদের মতের খন্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ অধ্যায়)

৬৯৫৩/৮৬: আবূল ইয়ামান (রহঃ) . . . . . হযরত ইব্ন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেছেন, নাবী (সাঃ) একদা মূসায়লামার কাছে একটু অবস্থান করলেন । তখন সে তার সাথী-সঙ্গীদের মধ্যে ছিল । নাবী (সাঃ) তাকে লক্ষ্য কয়ে বললেনঃ তুমি যদি আমার কাছে এ টুকরাটিও চাও, তা হলে আমি তোমাকে তাও তো দিচ্ছি না । তোমার ব্যাপারে আল্লাহ্ যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন তা তুমি অতিক্রম করতেও পারবে না । আর যদি তুমি ফিরে যাও, তা হলে আল্লাহ্ স্বয়ং তোমাকে ধ্বংস করে দিবেন ।

হাদিস নং: ৬৯৫৪ (জাহমিয়াদের মতের খন্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ অধ্যায়)

৬৯৫৪/৮৭: মূসা ইব্ন ইসমাঈল (রহঃ) . . . . . হযরত আবদুল্লাহ্ ইব্ন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, একদা আমি নাবী (সাঃ) এর সঙ্গে মদিনায় এক কৃষিক্ষেত কিংবা অনাবাদী জায়গা দিয়ে চলছিলাম । নাবী (সাঃ) নিজের সাথে রক্ষিত একটা খেজুরের শাখার উপর ভর দিয়ে চলছিলেন । তারপর আমরা একদল ইহুদীকে অতিক্রম করে যাচ্ছিলাম । তাদের একে অপরকে বলতে লাগল, তাঁকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা কর । আবার তাদের কেউ কেউ বলল - তাঁকে জিজ্ঞাসা করো না । হয়তো তিনি এমন জিনিস উপস্হাপন করে দিবেন, যা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয় লাগবে । তা সত্তেও তাদের কেউ বলে উঠল, আমরা অবশ্যই তাঁকে জিজ্ঞাসা করব । তারপর তাদেরই একজন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর দিকে এগিয়ে জিজ্ঞাসা করল, হে আবূল কাসিম! রুহ কি? এতে নাবী (সাঃ) নীরব রইলেন । বর্ণনাকারী বলেনঃ আমি তখন বুঝতে পেরেছিলাম- তার প্রতি ওহী অবতীর্ন হচ্ছে, এরপর তিনি (নিম্নোক্ত আয়াত) পড়লেনঃ “তোমাকে ওরা রুহ সম্পর্কে প্রশ্ন করে । বল, রূহ আমার প্রতিপালকের আদেশ ঘটিত । এবং তোমাদের সামান্য জ্ঞানই দেওয়া হয়েছে (১৭-৮৫)।” আমাশ বললেন, আয়াতে ‘অমা য়্যুতু’ আমাদের কিরাআতে এমনই বিদ্যমান আছে ।

হাদিস নং: ৬৯৫৫ (জাহমিয়াদের মতের খন্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ অধ্যায়)

৬৯৫৫/৮৮: আবদুল্লাহ ইব্ন ইউসুফ (রহঃ) . . . . . হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ্ এর পথে জিহাদের উদ্দেশ্য নিয়ে যে ব্যাক্তি বের হবে এবং আল্লাহ্ এর পথে জিহাদ এবং তাঁর কালেমার প্রতি বিশ্বাস ব্যতীত অন্য কিছু তাকে তার ঘর থেকে বের করেনি, তবে এমন ব্যাক্তির জন্য আল্লাহ্ যামিন হয়ে যান । হয়তো বা তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিবেন, নতুবা সে যে সাওয়াব ও গনীমাত হাসিল করেছে, তা সহ তিনি তাকে তার আবাসস্থলে প্রত্যাবর্তিত করবেন ।

হাদিস নং: ৬৯৫৬ (জাহমিয়াদের মতের খন্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ অধ্যায়)

৬৯৫৬/৮৯: মূসাদ্দাদ (রহঃ) . . . . . হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেনঃ যখন তোমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করবে, তখন দোয়ায় দৃঢ় ও সংকল্পবদ্ধ থাকবে । তোমাদের কেউই এমন কথা কখনো বলা চাই না যে, (হে আল্লাহ!)তুমি যদি চাও, তাহলে আমাকে দান কর । কেননা, আল্লাহ্ কে বাধ্যকারী এমন কেউ নেই ।

হাদিস নং: ৬৯৫৭ (জাহমিয়াদের মতের খন্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ অধ্যায়)

৬৯৫৭/৯০: আবূল ইয়ামান ও ইসমাঈল (রহঃ) . . . . . হযরত আলী ইব্ন আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত । একদা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তাঁর ও রাসূল-তনয়া ফাতিমা (রাঃ) এর কাছে রাতে এসেছেন । তিনি তাদেরকে বললেনঃ তোমরা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছ না? হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)! আমাদের জীবন অবশ্যই আল্লাহ্ এর হাতে । তিনি যখন আমাদেরকে ঘুম থেকে জাগিয়ে ওঠাতে চান জাগিয়ে ওঠান । আমি এ কথা বলার পর, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) ফিরে চললেন । আর আমার কথার কোন উত্তর করলেন না । যাওয়ার সময় তাঁকে উরূর ওপর হাত মেরে বলতে শুনেছি, মানুষ অধিকাংশ বিষয়েই বড্ড ঝগড়াটে ।

হাদিস নং: ৬৯৫৮ (জাহমিয়াদের মতের খন্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ অধ্যায়)

৬৯৫৮/৯১: মুহাম্মাদ ইব্ন সিনান (রহঃ) . . . . . হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত । তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেনঃ ঈমানদার শস্যক্ষেতের নরম ডগার মত । জোরে বাতাস এলেই তার পাতা ঝুঁকে পড়ে । যখন বাতাস থেমে যায়, তখন আবার স্হির হয়ে যায় । ঈমানদারদেরকে বালা-মূসিবত দ্বারা এভাবেই ঝুঁকিয়ে রাখা হয় । আর কাফেরের উদাহরণ দেবদারূ গাছ, যা একেবারেই কঠিন ও সোজা হয় । যদ্দরূন আল্লাহ যখন ইচ্ছা করেন সেটিকে মূলসহ উপড়ে ফেলেন ।

হাদিস নং: ৬৯৫৯ (জাহমিয়াদের মতের খন্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ অধ্যায়)

৬৯৫৯/৯২: আল হাকাম ইব্ন নাফি (রহঃ) . . . . . হযরত আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত । আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) -কে বলতে শুনেছি, যখন তিনি মিম্বরে উপবিষ্ট ছিলেন । তিনি বললেনঃ তোমাদের আগের উম্মতদের তূলনায় তোমাদের অবস্হানকাল আসরের সালাত (নামায/নামাজ) ও সুর্যাস্তের মধ্যবর্তী সময় । তাওরাতের ধারকগণকে তাওরাত প্রদান করা হলে তারা সে অনুযায়ী আমল করল, তবে দুপুর হলে তারা অপারগ হয়ে পড়ল । এ জন্য- তাদেরকে এক এক কীরাত করে পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া হল । অতঃপর ইনজীলের ধারকগণকে ইনজীল প্রদান করা হল, তারা তদনুযারী আমল করল আসরের সালাত (নামায/নামাজ) পর্যন্ত, তারপর তারা অক্ষম হয়ে পড়ায় তাদেরকে দেওয়া হল এক এক কীরাত করে । (সর্বশেষে) তোমাদেরকে কুরআন দেওয়া হল । ফলে এই কুরআন অনুযায়ী তোমরা আসর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আমল করেছ । এ জন্য তোমাদেরকে দুই কিরাত দুই কিরাত করে পারিশ্রমিক দেওয়া হয়েছে । তাওরাতের ধারকগণ বললো, হে আমাদের প্রতিপালক! এরাতো আমলে সর্বাপেক্ষা কম আবার পারিশ্রমিকে সবচেয়ে বেশি । আল্লাহ তখন বললেনঃ তোমাদের পারিশ্রমিকে তোমাদেরকে কিছু জুলম করা হয়েছে কি? তারা বলল, না । তখন আল্লাহ বললেন, সেটি হচ্ছে আমার অনুগ্রহ আমি যাকে চাই তাকে দিয়ে থাকি ।

হাদিস নং: ৬৯৬০ (জাহমিয়াদের মতের খন্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ অধ্যায়)

৬৯৬০/৯৩: আবদুল্লাহ ইব্ন মুহাম্মাদ (রহঃ) . . . . . হযরত উবাদা ইব্ন সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, আমি একদল লোকের সাথে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) -এর কাছে বায়‘আত করেছি । তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের বায়‘আত এ শর্তে কবূল করছি যে, তোমরা আল্লাহর সঙ্গে কোন কিছুকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, তোমাদের হাত ও পায়ের মধ্যবর্তী লজ্জাস্হানকে কেন্দ্র করে কোন ভিত্তিহীন জিনিস গড়বে না, কোন ভাল কাজে আমার অবাধ্য হবে না । তোমাদের থেকে যারা ওসব যথাযথ পুরা করবে, আল্লাহর কাছে তার প্রতিদান রয়েছে । আর যারা ওসব নিযিদ্ধ জিনিসের কোনটায় লিপ্ত হয়ে গেলে তাকে যদি সে কারণে দূনিয়ায় শাস্তি প্রদান করা হয়, তা হলে তা হবে তার জন্য কাফফারা এবং পবিত্রতা । আর যাদের দোষ আল্লাহ ঢেকে রাখেন সেটি আল্লাহ্ এর ইচ্ছাধীন বিষয় । তিনি ইচ্ছা করলে শাস্তি দিবেন, ইচ্ছা করলে ক্ষমা করে দিবেন ।