সোমবার, ২ জুলাই, ২০১২

হাদিস নং: ৫৯৪০ (দু‘আ অধ্যায়)

পরিচ্ছেদ : ২৬৬১/ ইস্তিখারার সময়ের দু‘আ -
৫৯৪০: মুতাররিফ ইব্ন আব্দুল্লাহ আবূ মুস‘আব (রঃ) ……… হযরত জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, নবী (সাঃ) আমাদের যাবতীয় কাজের জন্য ইস্তিখারা শিক্ষা দিতেন, যেমন ভাবে তিনি কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন । (আর বলতেন) যখন তোমাদের কারো কোন বিশেষ কাজ করার ইচ্ছা হয়, তখন সে যেন দু‘রাকআত নামায পড়ে এরূপ দু‘আ করে । “ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার জ্ঞানের দ্বারা আমার উদ্দিষ্ট কাজের মঙ্গলামঙ্গল জানতে চাই এবং আপনার ক্ষমতা বলে আমি কাজে সক্ষম হতে চাই । আর আমি আপনার মহান অনুগ্রহ প্রর্থনা করি । কারণ, আপনি ক্ষমতাবান আর আমার কোন ক্ষমতা নেই এবং আপনি জানেন আর আমি জানিনা । আপনউ গায়িব সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন । ইয়া আল্লাহ! যদি আপনার জ্ঞানে এ কাজটিকে আমার দ্বীনের ব্যাপারে, আমার জীবন ধারনে ও শেষ পরিণতিতে; রাবী বলেন, কিংবা তিনি বলেছেন : আমার বর্তমান ও ভবিষ্যতের দিক দিয়ে মঙ্গলজনক বলে জানেন তাহলে তা আমার জন্য নির্ধারিত করে দিন । আর যদি আমার এ কাজটি আমার দ্বীনের ব্যাপারে, জীবর ধারণে ও শেষ পরিণতিতে; রাবী বলেন, কিংবা তিনি বলেছেন : দুনিয়ায় আমার বর্তমান ও ভবিষ্যতের দিক দিয়ে, আপনি আমার জন্য অমঙ্গলজনক মনে করেন, তবে আপনি তা আমার থেকে ফিরিয়ে নিন । আমাকেও তা থেকে ফিরিয়ে রাখুন । আর যেখানেই হোক, আমার  জন্য মঙ্গলজনক কাজ নির্ধারিত করে দিন । তারপর আমাকে আপনার নির্ধারিত কাজের প্রতি তৃপ্ত রাখূন ।” রাবী বলেন, সে যেন এসময় তার প্রয়োজনের বিষয়ই উল্লেখ করে । 

হাদিস নং: ৫৯৪১ (দু‘আ অধ্যায়)

পরিচ্ছেদ : ২৬৬২/ অযু করার সময়ের দু‘আ করা -
৫৯৪১/৭৬: মুহাম্মদ ইব্ন আলা (রঃ) ……… আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, নবী (সাঃ) একবার পানি আনিয়ে অযূ করলেন । তারপর উভয় হাত তুলে দু’আ করলেন : ইয়া আল্লাহ! আপনি উবায়দ আবূ আমরকে ক্ষমা করে দিন । আমি তখন তাঁর বগলের শুভ্রতা দেখতে পেলাম । আরও দু’আ করলেন : ইয়া আল্লাহ! আপনি তাকে কিয়ামতের দিন অনেক লোকের উপর মর্যাদাবান করূন ।

হাদিস নং: ৫৯৪২ (দু‘আ অধ্যায়)

পরিচ্ছেদ : ২৬৬৩/ উঁচু জায়গায় চড়ার সময়ের দু‘আ -
৫৯৪২/৭৭: সুলায়মান ইব্ন হারব (রঃ) ……… আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, একবার এক সফরে আমরা নবী (সাঃ) এর সঙ্গে ছিলাম । যখন আমরা উঁচু জায়গায় উঠতাম তখন উচ্চস্বরে ‘আল্লাহু আকবার’ বলতাম । তখন নবী (সাঃ) বললেন : হে লোকেরা! তোমরা নিজেদের জানের উপর দয়া করো । কারণ তোমরা কোন বধির অথবা অনুপস্থিতকে আহ্বান করছ না বরং তোমরা আহ্বান করছ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা সত্তাকে । কিছুক্ষণ পর তিনি আমার কাছে এলেন, তখন আমি মনে মনে পড়ছিলাম : ‘লা হওলা ওলা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ তখন তিনি বলেন, হে আব্দুল্লাহ ইব্ন কায়স্! তুমি পড়বে ‘লা হাওলা ওয়ালা  ‍কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ । কারণ এ দু’আ হলো বেহেস্তের রত্ন ভান্ডার সমূহের অন্যতম । অথবা তিনি বললেন : আমি কি তোমাকে এমন একটি বাক্যের সন্ধান দেব না যে বাক্যটি জান্নাতের রত্ন ভান্ডার? সেটি থেকে একটি রত্ন হলো ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ ।

হাদিস নং: ৫৯৪৩ (দু‘আ অধ্যায়)

পরিচ্ছেদ : ২৬৬৪/ উপত্যকায় অবতরণ করার সময় দু‘আ -
পরিচ্ছেদ : ২৬৬৫/ সফরের ইচ্ছা করলে কিংবা সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করার পর দু‘আ -
৫৯৪৩/৭৮: ইসমাঈল (রঃ) ……… আব্দুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত । রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) যখন যুদ্ধ, হাজ্জ কিংবা উমরা থেকে ফিরতেন, তখন প্রতিটি উঁচু জায়গার উপর তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলতেন । তারপর বলতেন : “আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই । তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই । রাজত্ব, প্রশংসাও তাঁরই জন্য, তিনি সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান । আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, তওবাকারী, ইবাদতকারী, আপন প্রতিপালকের প্রশংসাকারী, আল্লাহ্ তা’আলা নিজ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন । তিনি তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন, আর দুশমনের দলকে তিনি একাই প্রতিহত করেছেন ।

হাদিস নং: ৫৯৪৪ (দু‘আ অধ্যায়)

পরিচ্ছেদ : ২৬৬৬/ বরের জন্য দু‘আ করা -
৫৯৪৪/৭৯: মুসাদ্দাদ (রঃ) ……… আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেন । নবী (সাঃ) আব্দুর রহমান ইব্ন আওফের গায়ে রং দেখে জিজ্ঞাসা করলেন : ব্যাপার কি? তিনি বললেন : আমি একজন মহিলাকে বিয়ে করেছি এক খন্ড সোনার বিনিময়ে । তিনি দু’আ করলেন : আল্লাহ তোমাকে বরকত দিন । একটা বকরী দিয়ে হলেও তুমি ওলীমা করো ।

হাদিস নং: ৫৯৪৫ (দু‘আ অধ্যায়)

পরিচ্ছেদ : ২৬৬৬/
৫৯৪৫/৮০: আবূ নু’মান (রঃ) ……… জাবির (রাঃ) বলেন, আমার আব্বা সাত অথবা নয়জন মেয়ে রেখে ইন্তেকাল করেন । তারপর আমি একজন মহিলাকে বিয়ে করি । নবী (সাঃ) বললেন : তুমি কি বিয়ে করেছ? আমি বললাম : হ্যাঁ । নবী (সাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, সে মহিলাটি কি কুমারী না অকুমারী? আমি বল্লাম : অকুমারী । তিনি বললেন, তুমি একজন কুমারী বিয়ে করলে না কেন? তা হলে তুমি তার সঙ্গে ক্রীড়া কৌতুক করতে এবং সেও তোমার সাথে ক্রীড়া কৌতুক করত । আর তুমি তার সাথে এবং সেও তোমার সাথে হাসীখুশী করতো । আমি বললাম : আমার আব্বা সাত অথবা নয়জন মেয়ে রেখে ইন্তেকাল করেছেন । সুতরাং আমি এটা পছন্দ করলাম না যে, তাদের মতো কুমারী বিয়ে করে আনি । এজন্য আমি এমন একজন মহিলাকে বিয়ে করেছি যে তাদের দেখাশুনা করতে পারবে । তখন তিনি দু’আ করলেন : আল্লাহ! তোমাকে বরকত দিন ।

হাদিস নং: ৫৯৪৬ (দু‘আ অধ্যায়)

পরিচ্ছেদ : ২৬৬৭/ নিজ স্ত্রীর নিকট এলে যে দু‘আ পড়তে হয় -
৫৯৪৬/৮১: মুসাদ্দাদ উসমান ইব্ন শায়বা (রঃ) ……… ইব্ন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, নবী (সাঃ) বলেন : তোমাদের কেউ স্ত্রীর সাথে সঙ্গমে মিলিত হওয়ার ইচ্ছা করলে সে বলবে : আল্লাহর নামে, হে আল্লাহ! আপনি আমাদের শয়তান থেকে দূরে রাখুন এবং আপনি আমাদেরকে যা দান করেন তা থেকে শয়তানকে দূরে রাখুন । তারপর তাদের এ মিলনের মধ্যে যদি কোন সন্তান নির্ধারিত থাকে তা হলে শয়তান এ সন্তানকে কখনও ক্ষতি করতে পারবে না ।

হাদিস নং: ৫৯৪৭ (দু‘আ অধ্যায়)

পরিচ্ছেদ : ২৬৬৮/ নবী (সাঃ) এর দু‘আ : হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ইহকালে কল্যাণ দাও -
৫৯৪৭/৮২: মুসাদ্দাদ (রঃ) ……… আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, নবী (সাঃ) অধিকাংশ সময়ই এ দু’আ পড়তেন : হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দাও এবং আখিরাতেও কল্যাণ দাও এবং আমাদের অগ্নিযন্ত্রণা থেকে রক্ষা কর ।

হাদিস নং: ৫৯৪৮ (দু‘আ অধ্যায়)

পরিচ্ছেদ : ২৬৬৯/ দুনিয়ার ফিতনা থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাওয়া -
৫৯৪৮/৮৩: ফারওয়া ইব্ন আবুল মাগরা (রঃ) ……… সা’দ ইব্ন আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, যেভাবে লেখা শিখানো হতো ঠিক এভাবেই আমাদের নবী (সাঃ) এ দু’আ শিখাতেন । ইয়া আল্লাহ! আমি কৃপণতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই । আর আমি ভীরূতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই । আর আপনার আশ্রয় চাই আমাদের বার্ধক্যের অসহায়ত্বের দিকে ফিরিয়ে দেওয়া থেকে । আর আমি আপনার আশ্রয় চাই দুনিয়ার ফিত্না এবং কবরের আযাব থেকে ।

হাদিস নং: ৫৯৪৯ (দু‘আ অধ্যায়)

পরিচ্ছেদ : ২৬৭০/ বারবার দু‘আ করা -
৫৯৪৯/৮৪: ইব্রাহীম ইব্ন মুনযির (রঃ) ……… হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত । একবার রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর উপর যাদু করা হলো । এমনকি তাঁর খেয়াল হতো যে, তিনি একটা কাজ করেছেন, অথচ তিনি তা করেন নি । সে জন্য তিনি আল্লাহর কাছে দু‘আ করলেন । এরপর তিনি (আয়িশা (রাঃ) ) কে বললেন : তুমি জানতে কি পেরেছ ? আমি যে বিষয়টা আল্লাহর কাছ থেকে জানতে চেয়েছিলাম, তা তিনি আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন । আয়িশা (রাঃ) বললেন : ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তা কি ? তিনি বললেন : (স্বপ্নের মধ্যে) আমার নিকট দু‘জন লোক আসলেন এবং একজন আমার মাথার কাছে, আরেক জন আমার উভয় পায়ের কাছে বসলেন । তারপর একজন তার সাথীকে জিজ্ঞাসা করলেন : এ ব্যক্তির রোগটা কি ? তখন অপর জন বললেন : তিনি যাদুতে আক্রান্ত । আবার তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তাকে কে যাদু করেছে ? অপর জন বললেন : লাবীদ ইব্ন আসাম । তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, তা কিসের মধ্যে করেছে ? তিনি বললেন : চিরূনী, ছেঁড়া চুল ও কাঁচা খেজুর গাছের  খোশার মধ্যে । পুনরায় তিনি জিজ্ঞাসা করলেন : এটা কোথায় ? তিনি বললেন : যুরাইক গোত্রের ‘যুআরওয়ান’ নামক কূপের মধ্যে । হযরত আয়িশা (রাঃ) বর্ণনা করেন । অতপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সেখানে গেলেন এবং (তা কূপ থেকে বের করিয়ে নিয়ে) হযরত আয়িশা (রাঃ) এর কাছে ফিরে এসে বললেন : আল্লাহর কসম! সেই কূপের পানি যেন মেন্দি তলানী পানি এবং এর (নিকটস্থ) খেজুর গাছগুলো ঠিক যেন শয়তানের মাথা । আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ফিরে এসে তাঁর কাছে কূপের বিস্তারিত অবস্থা জানালেন । তখন আমি বললাম : ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাঃ)! আপনি এ ব্যাপারটা লোক সমাজে প্রকাশ করে দিলেন না কেন ? তিনি বললেন : আল্লাহ তা‘আলা তো আমাকে রোগমুক্ত করেছেন । সুতরাং আমি লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা বিস্তার করা পছন্দ করি না । ঈসা ইব্ন ইউনুস ও লায়স (রঃ) ……… হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন : নবী (সাঃ) কে যাদু করা হলে তিনি বারবার দু‘আ করলেন, এভাবে পূর্ণ হাদীস বর্ণিত হয়েছে ।