শনিবার, ৭ জুলাই, ২০১২

হাদিস নং: ৫৮৮৫ (দু‘আ অধ্যায়)

৫৮৮৫/২০: আবূ নুয়ায়ম (রঃ) ……… হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, নবী (সাঃ) যখন ঘুমাতে চাইতেন, তখন বলতেন : “ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার নামেই মরি এবং জীবিত হই ।” আর তিনি যখন ঘুম থেকে সজাগ হতেন তখন বলতেন : “আল্লাহ তা’আলারই যাবতীয় প্রশংসা যিনি আমাদের (নিদ্রা জাতীয়) ওফাত দেওয়ার পর আবার নতুন জীবন দান করেছেন । আর অবশেষে তাঁরই কাছে আমাদের পুনরূথ্থান হবে ।”

হাদিস নং: ৫৮৮৬ (দু‘আ অধ্যায়)

৫৮৮৬/২১: আবদান (রঃ) ……… আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, নবী (সাঃ) যখন রাতে বিছানায় যেতেন তখন দু’আ পড়তেন : “ইয়া আল্লাহ! আমি আপনারই নামে মরি এবং জীবিত হই ।” আর যখন তিনি জেগে উঠতেন তখন বলতেন : “সকল প্রশংসা আল্লাহরই যিনি আমাদের জীবিত করেছেন, (নিদ্রা জাতীয়) মৃত্যুর পর এবং তারই কাছে পুনরূথ্থান সুনিশ্চিত ।”

হাদিস নং: ৫৮৮৭ (দু‘আ অধ্যায়)

৫৮৮৭/২২: আব্দুল্লাহ ইব্ন ইউসুফ (রঃ) ……… আবূ বকর সিদ্দিকী (রাঃ) থেকে বর্ণিত । একবার তিনি নবী (সাঃ) এর নিকট বললেন, আপনি আমাকে এমন একটি দু’আ শিখিয়ে দিন, যা দিয়ে আমি সালাতে দু’আ করব । তিনি বললেন, তুমি সালাতে পড়বে : “ইয়া আল্লাহ! আমি আমার নিজের উপর অনেক বেশী যুলুম করে ফেলেছি । আপনি ছাড়া আমার গুনাহ মাফ করার আর কেউ নেই । অতএব আপনি আপনার পক্ষ থেকে আমাকে মাফ করে দিন । আর আমার প্রতি দয়া করূন । নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও অতি দয়ালু ।”

হাদিস নং: ৫৮৮৮ (দু‘আ অধ্যায়)

৫৮৮৮/২৩: আলী (রঃ) ……… আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, (আল্লাহন বাণী)- “……… সালাতে স্বর উচ্চ করবে না এবং অতিশয় ক্ষীণও করবে না ……… ।” । এ আয়াতটি দু’আ সম্পর্কেই নাযিল করা হয়েছে ।

হাদিস নং: ৫৮৮৯ (দু‘আ অধ্যায়)

৫৮৮৯/২৪: উসমান ইব্ন আবূ শায়বা (রঃ) ……… আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমরা সালাতে বলতাম : “আস্সালামু আলাল্লাহ, আস্সালামু আলা ফুলান্নি” । তখন একদিন নবী (সাঃ) আমাদের বললেন : আল্লাহ তা’আলা তিনি নিজেই সালাম । সুতরাং তোমাদের কেউ যখন সালাতে বসবে, তখন সে যেন “আত্তাহিয়্যা-তু লিল্লাহি ……… ইবাদিল্লাহিচ্চা-লিহিন” পর্যন্ত পড়ে । সে যখন এতটুকু পড়বে তখন আসমান যমীনের আল্লাহর সব নেক বান্দাদের নিকট তা পৌছে যাবে । তারপর বলবে, “আশহাদু আন ………… আব্দুহু ওয়ারাসূলুহু” তারপর হামদ সানা যা ইচ্ছা পড়তে পারবে ।

হাদিস নং: ৫৮৯০ (দু‘আ অধ্যায়)

৫৮৯০/২৫: ইসহাক (রঃ) ……… আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত । গরীব সাহাবীগণ বললেন : ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ)! ধনশীল লোকেরা তো উচ্চমর্যাদা ও চিরস্থায়ী নিয়ামত নিয়ে আমাদের থেকে এগিয়ে গেলেন । তিনি জিজ্ঞাসা করলেন : তা কেমন করে ? তারা বললেন : আমরা যেরকম সালাত আদায় করি, তাঁরাও সেরকম সালাত আদায় করেন । আমরা যেরূপ জিহাদ করি, তারাও সেরূপ জিহাদ করেন এবং তাঁরা তাদের অতিরিক্ত মাল দিয়ে সাদাকা-খায়রাত করেন, কিন্ত আমাদের কাছে সম্পদ নেই । তিনি বললেন : আমি কি তোমাদের একটি আমল বাতলে দেবনা, যে আমল দ্বারা তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীদের মর্যাদা অর্জন করতে পারবে, আর তোমাদের পরবর্তীদের চাইতে এগিয়ে যেতে পারবে, আর তোমাদের অনুরূপ আমল কেউ করতে পারবেনা, কেবলমাত্র যারা তোমাদের ন্যায় আমল করবে তারা ব্যতীত । সে আমল হলো তোমরা প্রত্যেক সালাতের পর ১০ বার ‘সুবহা-নাল্লাহ’, ১০ বার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ এবং ১০ বার ‘আল্লাহু আকবার’ পাঠ করবে ।

হাদিস নং: ৫৮৯১ (দু‘আ অধ্যায়)

৫৮৯১/২৬: কুতায়বা ইব্ন সাঈদ (রঃ) ……… মুগীরা (রাঃ) আবূ সুফিয়ানের পুত্র মু’আবিয়া (রাঃ) এর নিকট এক পত্রে লিখেন যে, নবী (সাঃ) প্রত্যেক সালাত ফিরানোর পর বলতেন : আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবূদ নেই । তিনি একক । তাঁর কোন শরীক নেই । মূলক তাঁরই, যাবতীয় প্রশংসা তাঁরই প্রাপ্য । তিনি সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান । ইয়া আল্লাহ! আপনি কাউকে যা দান করেন তাতে বাধা দেওয়ার কেউ নেই । আর আপনি যাকে কোন কিছু দিতে বিরত থাকেন তাকে তা দেওয়ার মতো কেউ নেই । আপনার রহমত না হলে কারো চেষ্টা ফলপ্রসু হবে না ।

হাদিস নং: ৫৮৯২ (দু‘আ অধ্যায়)

৫৮৯২/২৭: মুসাদ্দাদ (রঃ) ……… সালামা ইব্ন আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন : একবার আমরা নবী (সাঃ) এর সঙ্গে খায়বার অভিযানে বের হলাম । সেনাবাহিনীর এক ব্যক্তি বললেন : ওহে আমির! যদি আপনি আপনার ছোট ছোট কবিতা থেকে কিছুটা আমাদের শুনাতেন ? তখন তিনি সাওয়ারী থেকে নেমে হুদী গাইতে গাইতে বাহন হাঁকিয়ে নিতে শুরূ করলেন । তাতে উল্লেখ করলেন : আল্লাহ তা’আলা না হলে আমরা হেদায়েত পেতাম না । (রাবী বলেন) এ ছাড়া আরও কিছু কবিতা তিনি আবৃত্তি করলেন, যা আমি স্মরণ রাখতে পারিনি । তখন রাসূলাল্লাহ (সাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন : এ উট চালক লোকটি কে ? সাথীরা বললেন : উনি আমির ইব্ন আকওয়া । তিনি বললেন : আল্লাহ তার উপর রহম করূন । তখন দলের একজন বললেন : ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি তার দু’আর সাথে আমাদেরকেও শামিল করলে ভাল হতো না ? এরপর যখন মুহাজিদগণ কাতার বন্দী হয়ে শত্রুর সাথে যুদ্ধ করলেন । এসময় আমির (রাঃ) তাঁর নিজের তরবারীর অগ্রভাগের আঘাতে আহত হলেন এবং এ আঘাতের দরূর তিনি মারা গেলেন । এদিন লোকেরা সন্ধ্যার পর (পাকের জন্য) বিভিন্নভাবে অনেক আগুন জ্বালালেন । তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন : এসব আগুন কিসের ? এসব আগুন দিয়ে তোমরা কি জ্বাল দিচ্ছ ? তারা বললেন : আমরা গৃহপালিত গাধার মাংস জ্বাল দিচ্ছি । তখন নবী (সাঃ) বললেন : পাত্রগুলোর মধ্যে যা আছে, তা সব ফেলে দাও এবং পাত্রগুলো ভেঙ্গে ফেল । এক ব্যক্তি বললেন : ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ)! পাত্রগুলোর মধ্যে যা আছে তা ফেলে দিলে এবং পাত্রগুলো ধুয়ে নিলে চলবেনা ? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন : তবে তাই কর । 

হাদিস নং: ৫৮৯৩ (দু‘আ অধ্যায়)

৫৮৯৩/২৮: মুসলিম (রঃ) ……… ইব্ন আবূ আওফা (রাঃ)বর্ণনা করতেন, যখন কেউ কোন সাদাকা নিয়ে নবী (সাঃ) এর নিকট আসতো তখন তিনি দু’আ করতেন : ইয়া আল্লাহ! আপনি অমুকের পরিজনের উপর রহমত নাযিল করূন । একবার আমার আব্বা তাঁর কাছে কিছু সাদাকা নিয়ে এলে তিনি বললেন : ইয়া আল্লাহ! আপনি আবূ আওফার বংশধরের উপর রহমত করূন ।

হাদিস নং: ৫৮৯৪ (দু‘আ অধ্যায়)

৫৮৯৪/২৯: আলী ইব্ন আব্দুল্লাহ (রঃ) ……… জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন : তুমি কি যুল-খালাসাহকে নিশ্চিহ্ন করে আমাকে চিন্তামুক্ত করবে ? সেটা ছিল এক মূর্তি । লোকেরা এর পূজা করতো । সেটাকে বলা হতো ইয়ামানী কাবা । আমি বললাম : ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি ঘোড়ার পিঠে স্থির থাকতে পারি না । তখন তিনি আমার বুকে জোরে একটা থাবা মারলেন এবং বললেন : ইয়া আল্লাহ! আপনি তাকে স্থির রাখুন এবং তাকে হিদায়েতকারী ও হিদায়েতপ্রাপ্ত বানিয়ে দিন । তখন আমি আমারই গোত্র আহমাসের পঞ্চাশজন যোদ্ধাসহ বের হলাম । সুফিয়ান (রঃ) বলেন : তিনি কোন কোন সময় বলেছেন : আমি আমার গোত্রের একদল যোদ্ধার মধ্যে গেলাম । তারপর আমি সেই মূর্তিটির নিকট গিয়ে তাকে জ্বালিয়ে ফেললাম । এরপর আমি নবী (সাঃ) এর কাছে এসে বললাম : ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর কসম! আমি যুল-খালাসাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে পাঁচড়াযুক্ত উটের ন্যায় করে ছেড়েই আপনার কাছে এসেছি । তখন তিনি আহমাস গোত্র ও তার যোদ্ধাদের জন্য দু’আ করলেন ।

হাদিস নং: ৫৮৯৫ (দু‘আ অধ্যায়)

৫৮৯৫/৩০: সাঈদ ইব্ন রাবী (রঃ) ……… আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, একদিন উম্মে সুলায়ম (রাঃ) নবী (সাঃ) কে বললেণ : আনাস তো আপনারই খাদেম । তখন তিনি বললেন : ইয়া আল্লাহ! আপনি তার সম্পদ সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিন এবং আপনি তাকে যা কিছু দান করেছেন, তাতে বরকত দান করূন ।

হাদিস নং: ৫৮৯৬ (দু‘আ অধ্যায়)

৫৮৯৬/৩১: উসমান ইব্ন আবূ শায়বা (রঃ) ……… আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, নবী (সাঃ) এক ব্যক্তিকে মসজিদে কুরআন তিলওয়াত করতে শুনলেন । তখন তিনি বললেন : আল্লাহ তার উপর রহমত করূন । সে আমাকে অমুক অমুক আয়াত স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, যা আমি অমুক অমুক সূরা থেকে ভুলে গিয়েছিলাম ।

হাদিস নং: ৫৮৯৭ (দু‘আ অধ্যায়)

৫৮৯৭/৩২: হাফস ইব্ন উমর (রঃ) ……… আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত । একদা নবী (সাঃ) গনীমতের মাল বন্টন করে দিলেন তখন এক ব্যক্তি মন্তব্য করলেন : এটা এমন বাটোয়ারা হলো যার মধ্যে অল্লাহর সন্তষ্টির খেয়াল রাখা হয়নি । আমি তা নবী (সাঃ) কে জানালে  তিনি রেগে গেলেন । এমনকি আমি তাঁর চেহারার মধ্যে রাগের আলামত দেখতে পেলাম । তিনি বললেন : আল্লাহ মূসা (আঃ) এর প্রতি রহম করূণ তাঁকে এর চাইতে অধিকতর কষ্ট দেয়া হয়েছে, কিন্তু তিনি ধৈর্য়ধারন করেছেন ।

হাদিস নং: ৫৮৯৮ (দু‘আ অধ্যায়)

৫৮৯৮/৩৩: ইয়াহইয়া ইব্ন মুহাম্মদ ইব্ন সাকান (রঃ) ……… ইব্ন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন যে, তুমি প্রতি জুমু’আয় লোকদের হাদীস শোনাবে । যদি এতে তুমি ক্লান্ত না হও তবে সপ্তাহে দুবার । আরও অধিক করতে চাও তবে তিনবার । আরও অধিক ওয়ায করে এ কুরআনের প্রতি মানুষের মনে বিরক্তির সৃষ্টি করো না । লোকেরা তাদের কথাবার্তায় মশগুল থাকা অবস্থায় তুমি তাদের কাছে এসে তাদের উপদেশ দেবে-আমি যেন এমন অবস্থায় তোমাকে না পাই । কারণ এতে তাদের কথায় বিগ্ন সৃষ্টি হবে এবং তারা বিরক্তি বোধ করবে । বরং তুমি এ সময় নীরব থাকবে । যদি তারা আগ্রহভরে তোমাকে উপদেশ দিতে বলে তাহলে তুমি তাদের উপদেশ দিবে । আর তুমি দূ’আর মধ্যে ছন্দবদ্ধ কবিতা পরিহার করবে । কারণ আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও তাঁর সাহাবীগণকে তা পরিহার করতেই দেখেছি । 

হাদিস নং: ৫৮৯৯ (দু‘আ অধ্যায়)

৫৮৯৯/৩৪: মুসাদ্দাদ (রঃ) ……… আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেণ : তোমাদের কেউ দু’আ করলে দু’আর সময় ইয়াকীনের সাথে দু’আ করবে এবং একথা বলবে না ইয়া আল্লাহ! আপনার ইচ্ছা হলে আমাকে কিছু দান করূন । কারণ আল্লাহকে বাধ্য করার মত কেউ নেই ।