শুক্রবার, ২২ জুন, ২০১২

৫১) সূরা আয-যারিয়াত ( মক্কায় অবতীর্ণ ) আয়াত - ৬০

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

০১. কসম ঝঞ্ঝাবায়ুর।
০২. অতঃপর বোঝা বহনকারী মেঘের।
০৩. অতঃপর মৃদু চলমান জলযানের,
০৪. অতঃপর কর্ম বন্টনকারী ফেরেশতাগণের,
০৫. তোমাদের প্রদত্ত ওয়াদা অবশ্যই সত্য।
০৬. ইনসাফ অবশ্যম্ভাবী।
০৭. পথবিশিষ্ট আকাশের কসম,
০৮. তোমরা তো বিরোধপূর্ণ কথা বলছ।
০৯. যে ভ্রষ্ট, সেই এ থেকে মুখ ফিরায়,
১০. অনুমানকারীরা ধ্বংস হোক,
১১. যারা উদাসীন, ভ্রান্ত।
১২. তারা জিজ্ঞাসা করে, কেয়ামত কবে হবে?
১৩. যেদিন তারা অগ্নিতে পতিত হবে,
১৪. তোমরা তোমাদের শাস্তি আস্বাদন কর। তোমরা একেই ত্বরান্বিত করতে চেয়েছিল।
১৫. খোদাভীরুরা জান্নাতে ও প্রস্রবণে থাকবে।
১৬. এমতাবস্থায় যে, তারা গ্রহণ করবে যা তাদের পালনকর্তা তাদেরকে দেবেন। নিশ্চয় ইতিপূর্বে তারা ছিল সকর্মপরায়ণ,
১৭. তারা রাত্রির সামান্য অংশেই নিদ্রা যেত,
১৮. রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমাপ্রার্থনা করত,
১৯. এবং তাদের ধন-সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতের হক ছিল।
২০. বিশ্বাসকারীদের জন্যে পৃথিবীতে নিদর্শনাবলী রয়েছে,
২১. এবং তোমাদের নিজেদের মধ্যেও, তোমরা কি অনুধাবন করবে না?
২২. আকাশে রয়েছে তোমাদের রিযিক ও প্রতিশ্রুত সবকিছু।
২৩. নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের পালনকর্তার কসম, তোমাদের কথাবার্তার মতই এটা সত্য।
২৪. আপনার কাছে ইব্রাহীমের সম্মানিত মেহমানদের বৃত্তান্ত এসেছে কি?
২৫. যখন তারা তাঁর কাছে উপস্থিত হয়ে বললঃ সালাম, তখন সে বললঃ সালাম। এরা তো অপরিচিত লোক।
২৬. অতঃপর সে গ্রহে গেল এবং একটি ঘৃতেপক্ক মোটা গোবস নিয়ে হাযির হল।
২৭. সে গোবসটি তাদের সামনে রেখে বললঃ তোমরা আহার করছ না কেন?
২৮. অতঃপর তাদের সম্পর্কে সে মনে মনে ভীত হলঃ তারা বললঃ ভীত হবেন না। তারা তাঁকে একট জ্ঞানীগুণী পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিল।
২৯. অতঃপর তাঁর স্ত্রী চীকার করতে করতে সামনে এল এবং মুখ চাপড়িয়ে বললঃ আমি তো বৃদ্ধা, বন্ধ্যা।
৩০. তারা বললঃ তোমার পালনকর্তা এরূপই বলেছেন। নিশ্চয় তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।
৩১. ইব্রাহীম বললঃ হে প্রেরিত ফেরেশতাগণ, তোমাদের উদ্দেশ্য কি?
৩২. তারা বললঃ আমরা এক অপরাধী সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরিত হয়েছি,
৩৩. যাতে তাদের উপর মাটির ঢিলা নিক্ষেপ করি।
৩৪. যা সীমাতিক্রমকারীদের জন্যে আপনার পালনকর্তার কাছে চিহ্নিত আছে।
৩৫. অতঃপর সেখানে যারা ঈমানদার ছিল, আমি তাদেরকে উদ্ধার করলাম।
৩৬. এবং সেখানে একটি গৃহ ব্যতীত কোন মুসলমান আমি পাইনি।
৩৭. যারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তিকে ভয় করে, আমি তাদের জন্যে সেখানে একটি নিদর্শন রেখেছি।
৩৮. এবং নিদর্শন রয়েছে মূসার বৃত্তান্তে; যখন আমি তাকে সুস্পষ্ট প্রমাণসহ ফেরাউনের কাছে প্রেরণ করেছিলাম।
৩৯. অতঃপর সে শক্তিবলে মুখ ফিরিয়ে নিল এবং বললঃ সে হয় যাদুকর, না হয় পাগল।
৪০. অতঃপর আমি তাকে ও তার সেনাবাহিনীকে পাকড়াও করলাম এবং তাদেরকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করলাম। সে ছিল অভিযুক্ত।
৪১. এবং নিদর্শন রয়েছে তাদের কাহিনীতে; যখন আমি তাদের উপর প্রেরণ করেছিলাম অশুভ বায়ু।
৪২. এই বায়ু যার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিলঃ তাকেই চুর্ণ-বিচুর্ণ করে দিয়েছিল।
৪৩. আরও নিদর্শন রয়েছে সামূদের ঘটনায়; যখন তাদেরকে বলা হয়েছিল, কিছুকাল মজা লুটে নাও।
৪৪. অতঃপর তারা তাদের পালনকর্তার আদেশ অমান্য করল এবং তাদের প্রতি বজ্রঘাত হল এমতাবস্থায় যে, তারা তা দেখেছিল।
৪৫. অতঃপর তারা দাঁড়াতে সক্ষম হল না এবং কোন প্রতিকারও করতে পারল না।
৪৬. আমি ইতিপূর্বে নূহের সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছি। নিশ্চিতই তারা ছিল পাপাচারী সম্প্রদায়।
৪৭. আমি স্বীয় ক্ষমতাবলে আকাশ নির্মাণ করেছি এবং আমি অবশ্যই ব্যাপক ক্ষমতাশালী।
৪৮. আমি ভূমিকে বিছিয়েছি। আমি কত সুন্দরভাবেই না বিছাতে সক্ষম।
৪৯. আমি প্রত্যেক বস্তু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি, যাতে তোমরা হৃদয়ঙ্গম কর।
৫০. অতএব, আল্লাহর দিকে ধাবিত হও। আমি তাঁর তরফ থেকে তোমাদের জন্যে সুস্পষ্ট সতর্ককারী।
৫১. তোমরা আল্লাহর সাথে কোন উপাস্য সাব্যস্ত করো না। আমি তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট সতর্ককারী।
৫২. এমনিভাবে, তাদের পূর্ববর্তীদের কাছে যখনই কোন রসূল আগমন করেছে, তারা বলছেঃ যাদুকর, না হয় উম্মাদ।
৫৩. তারা কি একে অপরকে এই উপদেশই দিয়ে গেছে? বস্তুতঃ ওরা দুষ্ট সম্প্রদায়।
৫৪. অতএব, আপনি ওদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিন। এতে আপনি অপরাধী হবেন না।
৫৫. এবং বোঝাতে থাকুন; কেননা, বোঝানো মুমিনদের উপকারে আসবে।
৫৬. আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।
৫৭. আমি তাদের কাছে জীবিকা চাই না এবং এটাও চাই না যে, তারা আমাকে আহার্য যোগাবে।
৫৮. আল্লাহ তা’আলাই তো জীবিকাদাতা শক্তির আধার, পরাক্রান্ত।
৫৯. অতএব, এই যালেমদের প্রাপ্য তাই, যা ওদের অতীত সহচরদের প্রাপ্য ছিল। কাজেই ওরা যেন আমার কাছে তা তাড়াতাড়ি না চায়।
৬০. অতএব, কাফেরদের জন্যে দুর্ভোগ সেই দিনের, যেদিনের প্রতিশ্রুতি ওদেরকে দেয়া হয়েছে।
সমাপ্ত

৫২) সূরা আত্ব তূর ( মক্কায় অবতীর্ণ ) আয়াত - ৪৯

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

০১. কসম তূর পর্বতের,
০২. এবং লিখিত কিতাবের,
০৩. প্রশস্ত পত্রে,
০৪. কসম বায়তুল-মামুর তথা আবাদ গৃহের,
০৫. এবং সমুন্নত ছাদের,
০৬. এবং উত্তাল সমুদ্রের,
০৭. আপনার পালনকর্তার শাস্তি অবশ্যম্ভাবী,
০৮. তা কেউ প্রতিরোধ করতে পারবে না।
০৯. সেদিন আকাশ প্রকম্পিত হবে প্রবলভাবে।
১০. এবং পর্বতমালা হবে চলমান,
১১. সেদিন মিথ্যারোপকারীদের দুর্ভোগ হবে,
১২. যারা ক্রীড়াচ্ছলে মিছেমিছি কথা বানায়।
১৩. সেদিন তোমাদেরকে জাহান্নামের অগ্নির দিকে ধাক্কা মেরে মেরে নিয়ে যাওয়া হবে।
১৪. এবং বলা হবেঃ এই সেই অগ্নি, যাকে তোমরা মিথ্যা বলতে,
১৫. এটা কি জাদু, না তোমরা চোখে দেখছ না?
১৬. এতে প্রবেশ কর অতঃপর তোমরা সবর কর অথবা না কর, উভয়ই তোমাদের জন্য সমান। তোমরা যা করতে তোমাদেরকে কেবল তারই প্রতিফল দেয়া হবে।
১৭. নিশ্চয় খোদাভীরুরা থাকবে জান্নাতে ও নেয়ামতে।
১৮. তারা উপভোগ করবে যা তাদের পালনকর্তা তাদের দেবেন এবং তিনি জাহান্নামের আযাব থেকে তাদেরকে রক্ষা করবেন।
১৯. তাদেরকে বলা হবেঃ তোমরা যা করতে তার প্রতিফলস্বরূপ তোমরা তৃপ্ত হয়ে পানাহার কর।
২০. তারা শ্রেণীবদ্ধ সিংহাসনে হেলান দিয়ে বসবে। আমি তাদেরকে আয়তলোচনা হুরদের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করে দেব।
২১. যারা ঈমানদার এবং যাদের সন্তানরা ঈমানে তাদের অনুগামী, আমি তাদেরকে তাদের পিতৃপুরুষদের সাথে মিলিত করে দেব এবং তাদের আমল বিন্দুমাত্রও হ্রাস করব না। প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃত কর্মের জন্য দায়ী।
২২. আমি তাদেরকে দেব ফল-মূল এবং মাংস যা তারা চাইবে।
২৩. সেখানে তারা একে অপরকে পানপাত্র দেবে; যাতে অসার বকাবকি নেই এবং পাপকর্মও নেই।
২৪. সুরক্ষিত মোতিসদৃশ কিশোররা তাদের সেবায় ঘুরাফেরা করবে।
২৫. তারা একে অপরের দিকে মুখ করে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।
২৬. তারা বলবেঃ আমরা ইতিপূর্বে নিজেদের বাসগৃহে ভীত-কম্পিত ছিলাম।
২৭. অতঃপর আল্লাহ আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করেছেন।
২৮. আমরা পূর্বেও আল্লাহকে ডাকতাম। তিনি সৌজন্যশীল, পরম দয়ালু।
২৯. অতএব, আপনি উপদেশ দান করুন। আপনার পালনকর্তার কৃপায় আপনি অতীন্দ্রিয়বাদী নন এবং উম্মাদও নন।
৩০. তারা কি বলতে চায়ঃ সে একজন কবি আমরা তার মৃত্যু-দুর্ঘটনার প্রতীক্ষা করছি।
৩১. বলুনঃ তোমরা প্রতীক্ষা কর, আমিও তোমাদের সাথে প্রতীক্ষারত আছি।
৩২. তাদের বুদ্ধি কি এ বিষয়ে তাদেরকে আদেশ করে, না তারা সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়?
৩৩. না তারা বলেঃ এই কোরআন সে নিজে রচনা করেছে? বরং তারা অবিশ্বাসী।
৩৪. যদি তারা সত্যবাদী হয়ে থাকে, তবেএর অনুরূপ কোন রচনা উপস্থিত করুক।
৩৫. তারা কি আপনা-আপনিই সৃজিত হয়ে গেছে, না তারা নিজেরাই স্রষ্টা?
৩৬. না তারা নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছে? বরং তারা বিশ্বাস করে না।
৩৭. তাদের কাছে কি আপনার পালনকর্তার ভান্ডার রয়েছে, না তারাই সবকিছুর তত্ত্বাবধায়ক?
৩৮. না তাদের কোন সিঁড়ি আছে, যাতে আরোহণ করে তারা শ্রবণ করে? থাকলে তাদের শ্রোতা সুস্পষ্ট প্রমাণ উপস্থিত করুক।
৩৯. না তার কন্যা-সন্তান আছে আর তোমাদের আছে পুত্রসন্তান?
৪০. না আপনি তাদের কাছে পারিশ্রমিক চান যে, তাদের উপর জরিমানার বোঝা চেপে বসে?
৪১. না তাদের কাছে অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান আছে যে, তারাই তা লিপিবদ্ধ করে?
৪২. না তারা চক্রান্ত করতে চায়? অতএব যারা কাফের, তারই চক্রান্তের শিকার হবে।
৪৩. না তাদের আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত কোন উপাস্য আছে? তারা যাকে শরীক করে, আল্লাহ তা’আলা তা থেকে পবিত্র।
৪৪. তারা যদি আকাশের কোন খন্ডকে পতিত হতে দেখে, তবে বলে এটা তো পুঞ্জীভুত মেঘ।
৪৫. তাদেরকে ছেড়ে দিন সেদিন পর্যন্ত, যেদিন তাদের উপর বজ্রাঘাত পতিত হবে।
৪৬. সেদিন তাদের চক্রান্ত তাদের কোন উপকারে আসবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না।
৪৭. গোনাহগারদের জন্যে এছাড়া আরও শাস্তি রয়েছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না।
৪৮. আপনি আপনার পালনকর্তার নির্দেশের অপেক্ষায় সবর করুন। আপনি আমার দৃষ্টির সামনে আছেন এবং আপনি আপনার পালনকরর্তাঁর সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করুন যখন আপনি গাত্রোত্থান করেন।
৪৯. এবং রাত্রির কিছু অংশে এবং তারকা অস্তমিত হওয়ার সময় তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করুন।
সমাপ্ত