বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০১৪

হাদিস নং: ৬৫৭১ (স্বপ্নের ব্যাখ্যা প্রদান অধ্যায়)

৬৫৭১/৬১: মুয়াম্মাল ইব্ন হিশাম আবূ হিশাম (রহঃ) . . . . . হযরত সামুরা ইব্ন জুনদাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) প্রায়ই তাঁর সাহাবীদেরকে বলতেন, তোমাদের কেউ কোন স্বপ্ন দেখেছ কি? রাবী বলেন, যাদের বেলায় আল্লাহ্ এর ইচ্ছা, তারা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) -এর কাছে স্বপ্ন বর্ণনা করত । তিনি একদিন সকালে আমাদেরকে বললেনঃ গত রাতে আমার কাছে দু‘জন আগন্তুক আসল । তারা আমাকে উঠাল । আর আমাকে বলল, চলুন । আমি তাদের সাথে চলতে লাগলাম । আমরা কাত হয়ে শায়িত এক ব্যাক্তির কাছে পৌছলাম । দেখলাম, অপর এক ব্যাক্তি তার নিকট পাথর নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে । সে তার মাথায় পাথর নিক্ষেপ করছে । ফলে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে । আর পাথর নিচে গিয়ে পতিত হচ্ছে । এরপর অবার সে পাথরটি অনুসরণ করে তা পুনরায় নিয়ে আসছে । ফিরে আসতে না আসতেই লোকটির মাথা পুর্বের ন্যায় পূনরায় ভাল হয়ে যায় । ফিরে এসে আবার অনুরূপ আচরণ করে, যা পূর্বে প্রথমবার করেছিল । তিনি বলেনঃ আমি তাদের (সাথীদ্বয়কে) বললাম, সুবহান্নাল্লাহ! এরা কারা? তিনি বললেনঃ তারা আমাকে বলল, চলুন, চলুন । তিনি বলেনঃ আমরা চললাম, এরপর আমরা চি হয়ে শায়িত এক ব্যাক্তির কাছে পৌছলাম । এখানেও দেখলাম, তার নিকট এক ব্যাক্তি লোহার আঁকড়া নিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে । আর সে তার চেহারার একদিকে এসে এটা দ্বারা মুখমন্ডলের একদিক মাথার পিছনের দিক পর্যন্ত এবং অনুরুপভাবে নাসারন্দ্র, চোখ ও মাথার পিছন দিক পর্যন্ত চিরে ফেলছে । আওফ (রহঃ) বলেনঃ আবূ রাজা (রহঃ) কোন কোন সময় ‘ইয়ুশারশিরূ’ শব্দের পরিবর্তে ‘ইয়াশুককু’ শব্দ বলতেন । এরপর ঐ লোকটি শায়িত ব্যাক্তির অপরদিকে যায় এবং প্রথম দিকের সাথে যেরুপ আচরণ করেছে অনুরুপ আচরণই অপরদিকের সাথেও করে । ঐ দিক হতে অবসর হতে না হতেই প্রথম দিকটি পুর্বের ন্যায় ভাল হয়ে যায় । তারপর আবার প্রথমবারের ন্যায় আচরণ করে । তিনি বলেনঃ আমি বললাম, সুবহানাল্লাহ্! এরা কারা? তিনি বলেনঃ তারা আমাকে বলল, চলুন, চলুন । আমরা চললাম এবং চুলা সদৃশ একটি গর্তের কাছে পৌছলাম । রাবী বলেনঃ আমার মনে হয় যেন তিনি বলেছিলেন, আর তথায় শোরগোলের শব্দ ছিল । তিনি বলেনঃ আমরা তাতে উকি মারলাম, দেখলাম তাতে বেশ কিছু উলং নারী ও পুরুষ রয়েছে । আর নিচ থেকে নির্গত আগুনের লেলিহান শিখা তাদেরকে স্পর্শ করছে । যখনই লেলিহান শিখা তাদেরকে স্পর্শ করে, তখনই তারা উচ্চস্বরে চিকার করে উঠে । তিনি বলেনঃ আমি তাদেরকে বললাম, এরা কারা? তারা আমাকে বলল, চলুন , চলুন । তিনি বলেনঃ আমরা চললাম এবং একটি নদীর (তীরে) গিয়ে পৌছলাম । রাবী বলেনঃ আমার যতদূর মনে পড়ে তিনি বলেছিলেন, নদীটি ছিল রক্তের মত লাল । আর দেখলাম, এই নদীতে এক ব্যাক্তি সাঁতার কাটছে । আর নদীর তীরে অপর এক ব্যাক্তি রয়েছে এবং সে তার কাছে অনেকগুলো পাথর একত্রিত করে রেখেছে । আর ঐ সাঁতারকারী ব্যাক্তি বেশ কিছুক্ষন সাঁতার কাটার পর সে ব্যাক্তির কাছে এসে পৌছে, যে নিজের নিকট পাথর একত্রিত করে রেখেছে । তথায় এসে সে তার মুখ খুলে দেয় আর ঐ ব্যাক্তিতার মুখে একটি পাথর ঢুকিয়ে দেয় । এরপর সে চলে যায়, সাঁতার কাটতে থাকে, আবার তার কাছে ফিরে আসে, যখনই সে তার কাছে ফিরে আসে তখনই সে তার মুখ খুলে দেয়, আর ঐ ব্যাক্তি তার মুখে একটি পাথর ঢুকিয়ে দেয় । তিনি বলেনঃ আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কারা? তারা বলল, চলুন, চলুন । তিনি বলেনঃ আমরা চললাম এবং এমন একজন কুশ্রী ব্যাক্তির কাছে এসে পৌছলাম, যা তোমার দৃষ্টিতে সর্বাধীক কুশ্রী বলে মনে হয় । আর দেখলাম, তার নিকট রয়েছে আগুন, যা সে জালাচ্ছে ও তার চতূর্দিকে দৌড়াচ্ছে । তিনি বলেনঃ আমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলাম! ঐ লোকটি কে? তারা বলল, চলুন, চলুন । আমরা চললাম এবং একটা সজীব শ্যামল বাগানে উপনীত হলাম, যেখানে বসন্তের হরেক রকম ফুলের কলি রয়েছে । আর বাগানের মাঝে আসমানের থেকে অধিক উচু দীর্ঘকায় একজন পূরুষ রয়েছে যার মাথা যেন আমি দেখতেই পাচ্ছি না । এমনিভাবে তার চতুস্পার্শে এত বিপূল সংখ্যক বালক-বালিকা দেখলাম যে, এত বেশি আর কখনো আমি দেখিনি । আমি তাদেরকে বললাম, উনি কে? এরা কারা? তারা আমাকে বলল, চলুন, চলুন । আমরা চললাম এবং একটা বিরাট বাগানে গিয়ে পৌছলাম । এমন বড় এবং সুন্দর বাগান আমি আর কখনো দেখিনি । তিনি বলেনঃ তারা আমাকে বলল, এর ওপরে চড়ুন । আমরা ওপরে চড়লাম । শেষ পর্যন্ত সোনা-রূপার ইটের তৈরি একটি শহরে গিয়ে আমরা উপনীত হলাম । আমরা শহরের দরজায় পৌছলাম এবং দরজা খুলতে বললাম । আমাদের জন্য দরজা খুলে দেয়া হল, আমরা তাতে প্রবেশ করলাম । তখন তথায় আমাদের সাথে এমন কিছু লোক সাক্ষা করল যাদের শরীরের অর্ধেক খুবই সুন্দর, যা তোমার দৃষ্টিতে সর্বাধিক সুন্দর মনে হয় । আর শরীরের অর্ধেক এমনই কুশ্রী ছিল । যা তোমার দৃষ্টিতে সর্বাধিক কুশ্রী মনে হয় । তিনি বলেনঃ সাথীদ্বয় ওদেরকে বলল, যাও ঐ নদীতে গিয়ে নেমে পড়। আর সেটা ছিল সুপ্রশস্ত প্রবাহমান নদী, যার পানি ছিল দুধের মত সাদা । ওরা তাতে গিয়ে নেমে পড়ল । অতপর এরা আমাদের কাছে ফিরে এল, দেখা গেল তাদের এ কুশ্রীতা দূর হয়ে গিয়েছে এবং তারা খুবই সূন্দর আকৃতির হয়ে গিয়েছে । তিনি বলেনঃ তারা আমাকে বলল, এটা জান্নাতে আদন এবং এটা আপনার বাসস্হান । তিনি বলেনঃ আমি বেশ উপরের দিকে তাকালাম, দেখলাম ধবধবে সাদা মেঘের ন্যায় একটি প্রাসাদ রয়েছে । তিনি বলেনঃ তারা আমাকে বলল, এটা আপনার বাসগূহ । তিনি বলেনঃ আমি তাদেরকে বললাম, আল্লাহ তোমাদের মাঝে বরকত দিন! আমাকে ছেড়ে দাও । আমি এতে প্রবেশ করি । তারা বলল, আপনি অবশ্য এতে প্রবেশ করলেন । তবে এখন নয় । তিনি বলেন, আমি এ রাতে অনেক বিস্ময়কর ব্যাপার দেখতে পেলাম- এগুলোর তাপর্য কি? তারা আমাকে বলল- আচ্ছা! আমরা আপনাকে বলে দিচ্ছি । ঐ যে প্রথম ব্যাক্তিকে যার কাছে আপনি পৌছেছিলেন, যার মাথা পাথর দিয়ে চুর্ন-বিচুর্ণ করা হচ্ছিল, সে হল ঐ ব্যাক্তি যে কুরআন গ্রহন করে তা ছেড়ে দিয়েছে । আর ফরয সালাত (নামায/নামাজ) ছেড়ে ঘুমিয়ে থাকে । আর ঐ ব্যাক্তি যার কাছে গিয়ে দেখেছেন যে, তার মুখের এক ভাগ মাথার পিছন দিক পর্যন্ত এমনিভাবে নাসারন্ধ্রে ও চোখ মাথার পিছন দিক পর্যন্ত চিরে ফেলা হচ্ছিল । সে হল ঐ ব্যাক্তি, যে সকালে আপন ঘর থেকে বের হয়ে এমন কোন মিথ্যা বলে যা চতূর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে । আর এ সকল উলঙ্গ নারী-পূরুষ যারা চুলা সদৃশ গর্তের অভ্যন্তরে রয়েছে তারা হল ব্যাভিচারী ও ব্যাভিচারিণীর দল । আর ঐ ব্যাক্তি, যার কাছে পৌছে দেখেছিলেন যে, সে নঁদীতে সাতার কাটছে ও তার মুখে পাথর ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে সে হল সুদখোর । আর ঐ কুশ্রী ব্যাক্তি, যে আগুনের কাছে ছিল এবং আগুন জ্বালাচ্ছিল আর সে এর চতূর্পার্শে দৌড়াচ্ছিল, সে হল জাহান্নামের দারোগা, মালিক ফেরেশতা । আর ঐ দীর্ঘকায় ব্যাক্তি যিনি বাগানে ছিলেন, তিনি হলেন, ইবরাহীম (আঃ) । আর তাঁর আশেপাশের বালক-বালিকারা হলো ঐসব শিশু, যারা ফিরাত (স্বভাবধর্মের) ওপর মৃত্যু বরন করেছে। তিনি বলেনঃ তখন কিছু সংখ্যক মুসলমান জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! মুশরিকদের শিশু সন্তানরাও কি? তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বললেনঃ মূশরিকদের শিশু সন্তানরাও । আর ঐসব লোক যাদের অর্ধেকাংশ অতি সুন্দর ও অর্ধেকাংশ অতি কুশ্রী । তারা হল ঐ সম্প্রদায় যারা স-অস উভয় প্রকারের কাজ মিশ্রিতভাবে করেছে । আল্লাহ্ তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন