৬৯৩১/৬৪: আবদুল
আযীয ইব্ন আবদুল্লাহ্ (রহঃ) . . . . . হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন,
লোকেরা (সাহাবাগণ) জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ)! কিয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের
প্রতিপালককে দেখতে পাব? রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ তোমরা কি পূর্ণিমার রাতে চাঁদ দেখতে
বাধাপ্রাপ্ত হও? সবাই বলে উঠলেন, না ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) । তিনি আবার বললেনঃ মেঘমুক্ত
আকাশে সূর্য দেখতে কি তোমরা বাধা-প্রাপ্ত হও? সবাই বলে উঠলেন, না, ইয়া রাসুলুল্লাহ
(সাঃ) । তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ তোমরা অনুরুপ আল্লাহ্ কে দেখতে পাবে । কিয়ামতের
দিন আল্লাহ্ লোকদেরকে সমবেত করে বলবেন, যে যার ইবাদত করছিলে সে যেন তার অনুসরণ করে
। তারপর যারা সূর্যের ইবাদত করত, সূর্যের অনুসরণ করবে । যারা চাঁদের ইবাদত করত, তারা
চাঁদের অনুসরণ করবে । আর যারা তাগুতদের পূজা করত, তারা তাদের অনুসরণ করবে । অবশিষ্ট
থাকবে এই উম্মাত । এদের মধ্যে এদের সুপারিশকারীরাও থাকবে অথবা রাবী বলেছেন, মুনাফিকরাও
থাকবে । এখানে বর্ণনাকারী ইবরাহীম (রহঃ) সন্দেহ পোষণ করেছেন । তারপর মহান আল্লাহ তাদের
কাছে এসে বলবেনঃ আমিই তোমাদের রব । তখন তারা বলবে, যতক্ষন আমাদের রব আমাদের কাছে না
আসবেন, ততক্ষন আমরা এ স্থানেই অবস্হান করব । আমাদের রব যখন আসবেন, তখন আমরা তাকে চিনতে
পারব । তারপর আল্লাহ এমন এক আকৃতিতে তাদের কাছে আসবেন, যে সুরতে তারা তাঁকে চিনবে ।
তখন তিনি বলবেন, তোমাদের রব আমিই । তারাও বলে উঠবে হ্যা, আপনিই আমাদের রব । তারপর
তারা তাঁর অনুসরণ করবে । এরপর দোযখের উপর পূল কায়েম করা হবে । যারা পূল অতিক্রম করবে,
আমি এবং আমার উম্মাত তাদের মধ্যে প্রথম থাকব । সেদিন একমাত্র রাসুলগন ছাড়া আর কেউই
কথা বলতে পারবে না । আর রাসুলগণেরও আবেদন হবে শুধু আল্লাহুম্মা সাল্লিম, সাল্লিম (আয়
আল্লাহ! নিরাপদে রাখুন, নিরাপদে রাখূন) । এবং জাহান্নামে সাদান-এর কাটার মত আঁকড়া থাকবে
। তোমরা দেখেছ কি সাদান-এর কাঁটা? সাহাবাগণ-বললেনঃ জী হ্যা, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ)
। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ জাহান্নামের যে কাটাগুলো এ সাদান-এর কাঁটার মত । হ্যাঁ,
তবে সেগুলো যে কত বড় হবে তা একমাত্র আল্লাহই জানেন । ওসব কাঁটা মানুষকে তাদের কর্ম
অনুপাতে বিদ্ধ করবে । কতিপয় মানুষ থাকবে ঈমানদার, তারা তাদের আমলের কারণে নিরাপদ থাকবে
। আর কেউ কেউ তার আমলের কারণে ধংস হবে । কাউকে নিক্ষেপ করা হবে আর কাউকে প্রতিদান দেওয়া
হবে । কিংবা অনুরুপ কিছু রাবী বলেছেনঃ তারপর (মহান আল্লাহ) প্রকাশমান হবেন । তিনি বান্দাদের
বিচারকার্য সমাপন করে যখন আপন রহমতে কিছু সংখ্যক দোযখবাসীকে বের করতে চইবেন, তখন তিনি
তাদের মধ্যকার শিরক-মুক্তদেরকে দোযখ থেকে বের করে দেয়ার জন্য ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ
দিবেন । তারাই হচ্ছে ওসব বান্দা যাদের উপর আল্লাহ রহমত করবেন, যারা সাক্ষ্য দিয়েছে
যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই । সিজদার চিহ্ন দ্বারা তাদের ফেরেশতাগণ চিনতে পারবেন
। সিজদার চিহ্নগুলো ছাড়া সেসব আদম সন্তানের সারা দেহ জাহান্নামের আগুন ভষ্মীভূত করে
দেবে । সিজদার চিহ্নসমূহ জ্বালিয়ে দেওয়া আল্লাহ্ জাহান্নামের উপর হারাম করে দিয়েছেন
। অতঃপর তাদেরকে আগুনে বিদগ্ন অবস্হায় জাহান্নাম থেকে বের করা হবে । তাদের ওপর ঢালা
হবে সঞ্জীবনীর পানি । এর ফলে নিম্নদেশ থেকে তারা এমনভাবে সজীব হয়ে ওঠবে, প্লাবনে ভাসমান
বীজ মাটি থেকে যেভাবে গজিয়ে ওঠে । এরপর আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদের বিচার ফায়সালা সমাপন
করবেন । এদের মধ্য থেকে একজন অবশিষ্ট রয়ে যাবে, যে জাহান্নামের দিকে মুখ করে থাকবে
। জাহান্নামীদের মধ্যে এই হচ্ছে সর্বশেষ জান্নাতে প্রবেশকারী । তখন সে বলবে, হে আমার
রব! আমার চেহারাটা জাহান্নাম থেকে ফিরিয়ে দাও । কেননা, জাহান্নামের (দুর্গন্ধময়) হাওয়া
আমাকে অস্থির করে তুলছে এবং এর শিখা আমাকে জ্বালাচ্ছে । তখন সে আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী
তাঁর কাছে প্রার্থনা করবে । তারপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তোমার প্রার্থনার জিনিস যদি
তোমাকে প্রদান করা হয়, তবে অন্য কিছু চাইবে না তো? তখন সে বলবে, না, তোমার ইজ্জতের
কসম করে বলছি, তা ছাড়া আমি আর কিছু চাইব না । তখন সে আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁকে বহু
অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দেবে । ফলে আল্লাহ তার চেহারা জাহান্নাম থেকে ফিরিয়ে দিবেন
। যখন সে জান্নাতের দিকে মুখ ফিরাবে এবং জান্নাতকে দেখবে, সে আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী
যতক্ষন চুপ থাকার চুপ থেকে বলবে, হে আমার রব! আমাকে জান্নাতের দার পর্যন্ত এগিয়ে দাও
। আল্লাহ তখন তাকে বলবেন, তুমি কি বহু প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার দাওনি যে তোমাকে যা দেওয়া
হবে, তা ছাড়া আর কিছু তুমি কখনো চাইবে না । সর্বনাশ তোমার, হে আদম সন্তান! কতই না
প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী তুমি । তখন সে বলবে, হে আমার রব! আল্লাহ তখন তাকে বলবেন, আচ্ছা,
এটি যদি তোমাকে দেওয়া হয়, আর কিছু তো চাইবে না? সে বলবে, তোমার ইজ্জতের কসম! সেটি
ছাড়া আমি আর কিছুই চাইব না । তারপর আল্লাহর ইচ্ছানূযায়ী প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার দেবে
আর আল্লাহ তাকে জান্নাতের দরজা পঁর্যন্ত এগিয়ে নেবেন । যখন সে জান্নাতের দরজার কাছে
দাড়াবে, তখন তার জন্য জান্নাত উনূক্ত হয়ে যাবে, তখন সে এর মধ্যকার আরাম আয়েশ-ও ভোগ
বিলাসের প্রাচুর্য দেখতে পাবে । তখন সে আল্লাহর ইচ্ছানূযায়ী নীরব থেকে, পরে বলবে, হে
আমার রব! আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিন । আল্লাহ বলবেনঃ তুমি কি আমাকে এই প্রতিশ্রুতি
ও অঙ্গীকার দাওনি যে, তোমাকে যা দেওয়া হবে, তা ছাড়া আর কিছু প্রার্থনা করবে না? সর্বনাশ
তোমার! হে বনী আদম! কতই না প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী তুমি । তখন সে বলবে, হে আমার রব! আমি
তোমার সৃষ্টিরাজির মধ্যে নিকৃষ্টতর হতে চাই না । তখন সে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে
থাকবে । অবশেষে আল্লাহ এতে হেসে দিবেন । আল্লাহ তার অবস্হার প্রেক্ষিতে হেসে তাকে নির্দেশ
দিবেন, তুমি জান্নাতে প্রবেশ কর । সে জান্নাতে প্রবেশ করলে আল্লাহ তাকে সম্বোধন করে
বলবেন এবার তুমি চাও । সে তখন রবের কাছে যাচ্ঞা করবে এবং আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করবে । পরিশেষে
আল্লাহ স্বয়ং তাকে স্বরণ করিয়ে দিয়ে বলবেন, এটা, ওটা চাও । এতে তার আরয-আকাঙ্ক্ষা সমাপ্ত
হলে আল্লাহ্ বললেনঃ তোমাকে ওগুলো দেয়া হল, সাথে সাথে সে পরিমাণ আরো দেয়া হল ।
আতা ইব্ন ইয়াযীদ (রহঃ) বলেনঃ হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) যখন হাদীসটির
বর্ণনা দিচ্ছিলেন, তখন হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) ও তার সাথে ছিলেন । তিনি হযরত আবূ
হুরায়রা (রাঃ)-এর এই বর্ণিত হাদীসের কোথাও প্রতিবাদ করলেন না । বর্ণনার শেষাংশে এসে
হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) যখন বর্ণনা করলেন, “আল্লাহ তা‘আলা তাকে বললেনঃ ওসব তোমাকে
দেওয়া হলো, আরো তার সমপরিমাণ তার সাথে দেওয়া হল” তখন হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) প্রতিবাদ
করে বললেনঃ হে হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ), রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তো বলেছেনঃ তার সাথে আরো
দশগুন । তখন হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ আমি সংরক্ষণ করেছি এভাবে-ওসব তোমাকে দেওয়া
হল, আর এর সাথে আরো এক গুণ দেওয়া হল । আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বললেনঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি,
আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছ থেকে এভাবে সংরক্ষণ করেছি -- ও সবই তোমাকে দেওয়া হল
এর সাথে তোমাকে দেওয়া হল আরো দশ গুণ । হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ এই হচ্ছে জান্নাতে
প্রবেশকারীদের মধ্যে সর্বশেষ ব্যাক্তি ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন